পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
আখ্যানমঞ্জরী।

কিয়ৎক্ষণ পরে দেখিতে পাইল, সে নিতান্ত ক্লান্ত হইয়া, গণ্ডশৈলের পাদদেশে মৃতবৎ পতিত আছে। তাহারা তাহাকে উঠাইয়া নৌকায় লইযা গেল, এবং যৎপরোনাস্তি প্রহারপূর্ব্বক তাহার দুই হস্ত পৃষ্ঠদেশে লইয়া দৃঢ়রূপে বদ্ধ করিল, এবং জাবিতানামকস্থানবাসী মিশনরিদিগের আশ্রমে লইয়া চলিল।

 জাবিতায় নীত হইয়া সেই স্ত্রীলোক এক গৃহে রুদ্ধ রহিল। এই স্থান সান্‌ফার্নাণ্ডো হইতে চল্লিশ ক্রোশ বিপ্রকৃষ্ট, মধ্যবর্ত্তী প্রদেশ গভীর অরণ্য দ্বারা পরিবৃত, সেই অরণ্য দুষ্প্রবেশ ও দুরতিক্রম বলি, তৎকাল পর্য্যন্ত তত্রত্য লোকমাত্রের বোধ ও বিশ্বাস ছিল। কেহ কখনও স্থলপথে, এক স্থান হইতে স্থানান্তরে যাইবার চেষ্টা করিত না। ফলতঃ, যাতায়াতের পক্ষে জলপথ ভিন্ন উপায়ান্তর পরিজ্ঞাত ছিল না। বিশেষতঃ বর্ষাকাল, বর্ষাকালে ঐ প্রদেশে গগনমণ্ডল নিরন্তর নিবিড় ঘনঘটায় আচ্ছন্ন থাকে, রাত্রিকাল এরূপ অন্ধতমসে আবৃত হয় যে, কোনও ব্যক্তি বা বস্তু সম্মুখে থাকিলেও লক্ষ্য করিতে পারা যায় না। ঈদৃশ প্রবল প্রতিবন্ধক সত্ত্বে, অতি দুঃসাহসিক ব্যক্তিও সাহস করিয়া, স্থলপথে জাবিতা হইতে সান্‌ফার্নাণ্ডো যাইতে উদ্যত হইতে পাবে না।

 কিন্তু, সুতবিরহবিধুরা জননীর পক্ষে, এই সমস্ত প্রতিবন্ধক, প্রতিবন্ধক বলিয়াই গণনীয় নহে। সেই হতভাগা নারী এই চিন্তা করিতে লাগিল, আমার পুত্রেরা সান্‌ফার্নাণ্ডোতে রহিল, আমি তাহাদের বিরহে একাকিনী এখানে থাকিয়া, কোনও