পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
আখ্যানমঞ্জরী

পরিচিত হইয়াছি। আপনি বিখ্যাত-কুলে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, এবং সেইজন্য, আমা অপেক্ষা প্রবল ও পরাক্রান্ত দস্যু হইযাছেন, এইমাত্র বিশেষ।

 আলেকজাণ্ডর বলিলেন, আমি অন্যের ধন লইয়াছি বটে, কিন্তু অকাতরে সেই ধনের বিতরণ করিয়াছি। আমি কোনও কোনও রাজ্যের ও নগরের উচ্ছেদ করিয়াছি বটে, কিন্তু কত শত সমৃদ্ধ রাজ্য ও নগর সংস্থাপিত করিয়াছি। তদ্ব্যতিরিক্ত, আমার যত্নে ও উৎসাহদানে শিল্প, বাণিজ্য ও দর্শনশাস্ত্রের কত উন্নতি হইয়াছে। দস্যু বলিল, আমি ধনৰানের ধনহরণ করিযাছি বটে, কিন্তু, সেই ধন অকাতরে অনেক দরিদ্রকে দান করিয়াছি। আমি কখনও কাহারও গৃহদাহ করিয়াছি বটে, কিন্তু নিজ অর্থ দিয়া, অনেক অনাথের গৃহনির্মাণ করিয়া দিয়াছি। আমি অন্যের উপর অত্যাচাব করিয়াছি বটে, কিন্তু অনেক বিপন্ন ব্যক্তির বিপদুদ্ধার করিয়াছি। আপনি যে দর্শনশাস্ত্রের উল্লেখ করিলেন, আমি তাহার কিছুমাত্র জানি না বটে, কিন্তু ইহা স্থির জানি, আমি অথবা আপনি জগতের যত অনিষ্ট করিয়াছি, আমরা কিছুতেই তাহার প্রতিবিধান করিতে পারিব না।

 দস্যু এইরূপ অকুতোভয়তা ও স্বরূপবাদিতা দর্শনে, আলেকজাণ্ডার পর নাই প্রীতি প্রাপ্ত হইলেন, তৎক্ষণাৎ তাহার বন্ধনমোচনের এবং সমুচিত পরিচর্যার আদেশপ্রদান করিলেন, অনন্তর, একান্তে আসীন হইয়া, দস্যু ও দিগ্বিজয়ীর বিশেষ কি, নিবিষ্টচিত্তে, এই বিষয়ে চিন্তা করিতে লাগিলেন।