পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উৎকট বৈরসাধন।
৩১

করিবার নিমিত্ত স্বদেশীয়দিগকে উৎসাহিত করিতে লাগিলেন। কিন্তু ইতঃপূৰ্বে মুসলমানদিগের প্রতিকূলবর্ত্তী হইয়া, তত্রত্য লোকদিগকে যে অসহ্য যন্ত্রণা ও উৎকট অত্যাচার সহ্য করিতে হইয়াছিল, তৎসমুদয় তৎকাল পর্য্যন্ত তাহাদের হৃদয়ে বিলক্ষণ জাগরূক ছিল, এজন্য তাহারা সাহস করিয়া, তদীয় উপদেশ ও পরামর্শের অনুবর্ত্তী হইতে পারিল না। তাহারা এই বিবেচনা করিল, যদি মুসলমানদের প্রতিকূলাচরণে প্রবৃত্ত হইয়া কৃতকার্য্য হইতে না পারি, তাহারা অধিকতর অত্যাচার কবিবে, এবং রাজবিদ্রোহী বলিয়া অনেকের প্রাণদণ্ড হইবে, তদপেক্ষা এই অবস্থায় কালযাপন করা অনেক অংশে শ্রেয়স্কর। সুতরাং বিদবমন্ সিদ্ধকাম হইতে পারিলেন না।

 একদিন তিনি, কিংকর্ত্তব্য-নিরূপণে নিবিষ্টচিত্ত হইয়া উপবিষ্ট আছেন, এমন সময়ে, এক মুসলমান সৈনিকপুরুষ, পরপ্রেরিত প্রণিধি বলিয়া তাঁহাকে অবরুদ্ধ করিল। বিচারালয়ে নীত হইলে, তিনি অশেষপ্রকারে আত্মদোষক্ষালনের চেষ্টা পাইলেন, কিন্তু বিচারকর্ত্তার অন্তঃকরণ হইতে সন্দেহ দূর হইল না। বিচারকর্ত্তা তাঁহার প্রকৃত পরিচয় পাইলে ও যথার্থ উদ্দেশ্য অবগত হইলে, তিনি সহজে নিষ্কৃতিলাভ করিতে পারিতেন না, তাঁহার উপর পরপ্রেরিত প্রণিধিবোধে দুরভিসন্ধির আশঙ্কামাত্র জন্মিয়াছিল, তদ্বিষয়ে সবিশেষ প্রমাণ পাওয়া গেল না, এজন্য বিচারকর্ত্তা অন্যবিধ উৎকট দণ্ডবিধানে বিরত হইয়া, কোড়া মারিয়া ছাড়িয়া দিতে আদেশ দিলেন।