পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
আখ্যানমঞ্জরী।

অধ্যাপক মহাশয়ের নিকট ভর্ৎসনা ও অবমাননা প্রাপ্ত হইবেন, এজন্য তাঁহার অতিশয় দুর্ভাবনা উপস্থিত হইল। সেই দুর্ভাবনা বশতঃ কিছু লিখিতে না পারিয়া, তিনি নিতান্ত বিষণ্ণ-মনে শয়ন করিলেন, কিন্তু, পরদিন প্রাতঃকালে, শয্যা হইতে গাত্রোত্থান করিয়া দেখিলেন, তাঁহার টেবিলের উপর ঐ সমস্ত প্রশ্নের সম্পূর্ণ উত্তর লিখিত রহিয়াছে, আশ্চর্য্যের বিষয় এই, তৎসমুদয় তাঁহার স্বহস্তলিখিত।

 এইরূপ অঘটনঘটনা দর্শনে, তিনি যৎপরোনাস্তি বিস্ময়াপন্ন হইলেন, এবং যথাসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গমনপূর্ব্বক, স্বীয় অধ্যাপক মহাশয়ের নিকট, আদ্যোপান্ত সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণন করিলেন। তিনি শুনিয়া সাতিশয় বিস্ময়াবিষ্ট হইলেন। এই অদ্ভুত ব্যাপারের সবিশেষ পরীক্ষা করিবার মানসে, সেদিন তিনি তাঁহাকে পূর্ব্বাপেক্ষা অধিকসংখ্যক ও অধিক দুরূহ প্রশ্নের উত্তর লিখিয়া আনিতে আদেশ দিলেন, এবং এই অভূতপূর্ব্ব ব্যাপারের নিগূঢ় তত্ত্ব অবধারিত করিবার অভিপ্রায়ে, সে দিবস রজনীযোগে, প্রচ্ছন্নভাবে, তদীয় আবাসগৃহের সন্নিধানে অবস্থিতি করিলেন। সাইরিলো, শয়নগৃহে প্রবেশপূর্ব্বক, নিদ্রাগত হইলেন, কিন্তু, দুই তিন দণ্ড পরেই, প্রগাঢ়নিদ্রাবস্থায় শয্যা হইতে উঠিলেন, প্রদীপ জ্বালিয়া পড়িতে ও লিখিতে বসিলেন, এবং অনধিক সময়ের মধ্যেই, সমস্ত প্রশ্নের উত্তর লিখিয়া, সমাপন করিলেন। তদ্দর্শনে যারপরনাই চমৎকৃত হইয়া, অধ্যাপক মহাশয় স্বীয় আবাসগৃহে প্রতিনিবৃত্ত হইলেন।