পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অকুতোভয়তা।
৪৯

 এইরূপে তিনি অনেক বুঝাইলেন ও অনেক ভয় দেখাইলেন, কিন্তু দেশুলিয়র, কোনও ক্রমেই বিচলিত হইলেন না। কৌণ্টেস্ও তাঁহাকে অশেষ প্রকারে বুঝাইলেন ও বিস্তর বাদানুবাদ করিলেন, কিন্তু কৃতকার্য্য হইতে পারিলেন না। দেশুলিয়রের এই স্থির-সিদ্ধান্ত ছিল, লোকে সচরাচর যে ভূতের গল্প ও ভূতের উপদ্রবের বর্ণন করে, সে সকল নিরবচ্ছিন্ন ভ্রান্তিমূলক ও কুসংস্কারজনিত, দুর্ব্বলচিত্ত লোকেরাই তাদৃশ কল্পিত বিষয়ে বিশ্বাস করিয়া থাকে। এই সংস্কারবশতঃ, কিছুতেই তাঁহার সাহস সঙ্কুচিত বা ব্যতিক্রান্ত হইল না। তদ্দর্শনে কৌণ্ট ও কৌণ্টেস্ ভয়ে ও দুর্ভাবনায় অভিভূত হইযা, যথোচিত বিনয় করিলেন, ভর্ৎসনা করিলেন, দুঃখপ্রকাশ করিলেন, কিন্তু কিছুতেই তাঁহাকে অবলম্বিত অধ্যবসায় হইতে বিরত করিতে পারিলেন না, অবশেষে, নিতান্ত নিরুপায় ভাবিয়া, তাঁহার প্রস্তাবে সম্মত হইলেন।

 অনন্তর দেশুলিয়র এক পরিচারিকা সমভিব্যাহারে শয়নাগারে প্রবেশ করিলেন, এবং পরিচ্ছদপরিহার পূর্ব্বক, পল্যঙ্কে আরোহণ করিয়া, পরিচারিকাকে বলিলেন, পল্যঙ্কের শিখরের দিকে একটি বড় বাতি জ্বালিয়া রাখ, এবং দৃঢ়রূপে দ্বার বন্ধ করিয়া চলিয়া যাও। সে তাঁহার আদেশানুরূপ কার্য্যের সমাধা করিয়া প্রস্থান করিলে পর, তিনি শয়ন করিয়া কিয়ৎক্ষণ পুস্তক পাঠ করিলেন, এবং পাঠ করিতে করিতে নিদ্রাভিভূত হইলেন।