পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
আখ্যানমঞ্জরী।

 কিঞ্চিৎ কাল পরে, বিকট শব্দ হইতে লাগিল। সেই শব্দে তাঁহার নিদ্রাভঙ্গ হইল। অবিলম্বে দ্বার উদ্ঘাটিত ও পদসঞ্চারধ্বনি আরব্ধ হইল। শ্রবণমাত্র, দেশুলিয়র স্থির করিলেন, বাটীর সকলে যাহাকে ভূত ভাবিয়া ভয় পাইতে থাকে, সে এই। পরে তিনি অবিচলিত চিত্তে ও অসঙ্কুচিত স্বরে, তাহাকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, তুমি যে হও না কেন, আমি তোমায় স্পষ্ট বলিতেছি, কিছুতেই ভয় পাই না, এবং এই বাটীর সকলের যে অমূলক ভয় ও সংস্কার জন্মিয়া আছে, আজ তাহার নিগূঢ় তত্ত্ব উদ্ভাবিত করিব বলিয়া, যে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করিযাছি, কোনও কারণে তাহা হইতে বিচলিত হইব না। যদি ভয় দেখাইয়া, আমায় তাহা হইতে বিরত করা তোমার অভিপ্রেত হয়, তুমি কদাচ কৃতকার্য্য হইতে পারিবে না। আমার ভাগ্যে যাই ঘটুক না কেন, শেষ পর্য্যন্ত না দেখিয়া, আমি ক্ষান্ত হইব না।

 দেশুলিয়র এই বলিয়া বিরত হইলেন, কিন্তু উত্তর পাইলেন না। তিনি পুনরায় সেইরূপ বলিলেন, তথাপি কোনও উত্তর পাইলেন না। পল্যঙ্কের অতি সন্নিকটে একটি কাঠের পরদা ছিল, উহা উলটিয়া মশারির উপর পতিত হওয়াতে, একটা বিকট শব্দ হইল। যাহাদের ভূতের ভয় আছে, এরূপ অবস্থায় ঐরূপ শব্দ শুনিলে ও ঘটনা দেখিলে, তাহাদের বুদ্ধিভ্রংশ ও চৈতন্যধ্বংস হয়, তাহার কিছুমাত্র সংশয় নাই। কিন্তু, দেশুলিয়রের মনে ভয় বা উদ্বেগের অণুমাত্র সঞ্চার হইল না। তাঁহার এই