পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অকুতোভয়তা।
৫১

সন্দেহ হইল, বাটীর কোনও ভৃত্য আমায় ভয় দেখাইতে আসিয়াছে। যাহা হউক, তিনি সেই রাত্রিচরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কে, কি জন্য এখানে আসিয়াছ, বল। তুমি কখনই এরূপে ভয়প্রদর্শন করিয়া, আমায় ব্যাকুল বা বিচলিত করিতে পারিবে না। সে কোনও উত্তর দিল না, প্রশান্তভাবে গৃহমধ্যে ভ্রমণ করিতে লাগিল। কিয়ৎক্ষণ পরে, সে জ্বলন্ত বাতির নিকটে উপস্থিত হইল। অবিলম্বে বৃহৎ বাতি ও বাতির প্রকাণ্ড আধার উলটিয়া পড়িল। ভয়ানক শব্দ ও গৃহ অন্ধকারময় হইল। তাহাতেও তিনি কিঞ্চিন্মাত্র ভীত বা বিচলিত হইলেন না।

 অবশেষে, সেই রাত্রিচর পল্যঙ্কের পাদদেশে উপস্থিত হইল। তখনও দেশুলিয়রের অন্তঃকরণে অণুমাত্র ভয়সঞ্চার হইল না। ভাল হইল, তুমি কি পদার্থ, এখনই আমি অনায়াসে তাহার নির্ণয় করিতে পারিব, এই বলিয়া গাত্রোত্থান পূর্ব্বক, পল্যঙ্কের পাদদেশে হস্তপ্রসারণ করিয়া, তিনি তাহার অন্বেষণ করিতে লাগিলেন। তাঁহার দুই কর মখমলের ন্যায় কোমল দুই কর্ণে সংলগ্ন হইল। তিনি বলপূর্বক সেই দুই কর্ণ ধরিলেন, এবং যাবৎ রাত্রিশেষ ও সূর্য্যোদয় না হয়, ছাড়িবেন না স্থির করিলেন, কিন্তু কাহার কর্ণ ধরিলেন, কিছুই অবধারণ করিতে পারিলেন না। এই ভাবে অবস্থিত হইয়া, তিনি রজনীর অবশিষ্ট ভাগ অতিবাহিত করিলেন।

 রাত্রি প্রভাত হইলে, এই অদ্ভুত ব্যাপারের স্বরূপনির্ণয়