পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
আখ্যানমঞ্জরী।

হয়। কিন্তু সাবিনস ও অলিন্দা, সচ্ছন্দচিত্তে ও অবিচলিত সদ্ভাবে কালহরণ করিতে লাগিলেন, একদিন, একক্ষণের জন্য তাঁহাদের বিষাদ বা অসন্তোষের লক্ষণ ঘটে নাই। উভযেই উভয়কে সুখী ও সচ্ছন্দচিত্ত করিবার নিমিত্ত, প্রাণপণে যত্ন ও প্রয়াস করিতেন। কখনও কখনও সাবিনস্ অলিন্দার কষ্ট-দর্শনে ক্ষুব্ধ হইয়া আক্ষেপ প্রকাশ করিতেন। কিন্তু অলিন্দা বলিতেন, অয়ি নাথ, তুমি অকারণে আক্ষেপ করিতেছ কেন? যদি আমি তোমার সহবাসসুখে বঞ্চিত না হই, তাহা হইলে যত দুরবস্থা ঘটুক না কেন, আমি অণুমাত্র অসুখবোধ করিব না। যতদিন আমার এরূপ বিশ্বাস থাকিবে, আমার উপর তোমার স্নেহের ও অনুরাগের বৈলক্ষণ্য ঘটে নাই, ততদিন কোনও কারণেই আমার চিত্তবৈকল্য বা কষ্টবোধ হইবে না, এবং যত দিন তোমার প্রেয়সী বলিয়া আমার অভিমান থাকিবে, ততদিন সম্পত্তিনাশ, বন্ধুবিচ্ছেদ বা অন্যবিধ কোনও কারণে আমি কিছুমাত্র দুঃখবোধ করিব না। অলিন্দার এইরূপ বাক্যবিন্যাস শ্রবণে মোহিত ও পুলকিত হইয়া, সাবিনস্ অশ্রুবিসর্জ্জন করিতেন।

 সর্বস্বান্ত ঘটিবার পরেও, তাঁহাদের যৎকিঞ্চিৎ যাহা সংস্থান ছিল, কিছুদিনের মধ্যেই তাহা নিঃশেষিত হইল, সুতরাং সকল বিষয়েই তাঁহাদের দুঃখের একশেষ ঘটিল। তাঁহারা তাহাতে অণুমাত্র বিষাদ বা অসন্তোষ প্রদর্শন করিলেন না। অল্পদিন হইল, তাঁহাদের যে সন্তান জন্মিয়াছিল, সেইটিকে অবলম্বন করিয়া,