পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (দ্বিতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কৃতঘ্নতা
৩৯

 সৈনিক পুরুষের আশ্রয়দাতা যে ভূমিতে বাস ও কৃষিকর্ম্ম দ্বারা জীবিকানির্ব্বহ করিতেন, ফিলিপ, দানপত্র দ্বারা, সেই ভূমি, ঐ সৈনিক পুরুষকে পুরস্কারস্বরূপ দিলেন। এইরূপে সে, প্রাণদাতার অধিকৃত ভূমির অধিকারী হইযা, তাঁহার গৃহ ভগ্ন করিয়া, তাহাকে বলপূর্বক উঠাইয়া দিল। তিনি, তদীয় ঈদৃশ অকৃতজ্ঞতা দর্শনে, সতিশয় বিস্মিত ও নিরিতিশয় দুঃখিত হইলেন, এর আদ্যোপান্ত সমস্ত বৃত্তান্ত আবেদনপত্র দ্বারা, ফিলিপের গোচর কবিলেন। মানুষ এতদূর অকৃতজ্ঞ হইতে পারে, তাহার সেরূপ বোধ ছিল না। পত্রপাঠ মাত্র, তাঁহার কোপানল প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল। তিনি, তৎক্ষণাৎ পূর্ব্ব-স্বামীকে সেই ভূমিতে অধিকারপ্রদানের আদেশপ্রদান কবিলেন, এবং সেই পাপিষ্ঠ সৈনিকপুরুষকে স্বীয় সমক্ষে আনাইয়া, তাহার ললাটে, কৃতঘ্ন নরাধম, এই দুটি শব্দ লেখাইয়া, আপন অধিকার হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিলেন।

 কৃতঘ্ন ব্যক্তি, সর্ব্বকালে, সর্ব্ব-দেশে, সর্ব্ব সমাজে, নিরতিশয় নিন্দনীয় হইয়া থাকে। মনুষ্যের যত দোষ সম্ভবিতে পারে, গ্রীদেশীয় লোকে কৃতঘ্নতাকে, সেই সমস্ত দোষ অপেক্ষা, গুরুতর বিবেচনা করিতেন। তাঁহারা কৃত ব্যক্তির সহিত বাক্যালাপ ও তাহার মুখাবলোকন, করিতেন না।