পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আখ্যানমঞ্জরী।

কিয়ৎক্ষণ পরে, তিনি রেডিং নগরে উপস্থিত হইলেন। তাহার পরিচিত এক বৃদ্ধা স্ত্রী ঐ নগরে বাস করিত। তিনি তাহার আলয়ে গমন করিলেন, এবং কহিলেন, দেখ, যাবৎ এই বালক সুস্থ হইতে না পারে, তোমার আশ্রয়ে থাকিবে, ইহার চিকিৎসা ও শুশ্রূষার নিমিত্ত, যে ব্যয় হইবে, সে সমস্ত আমি দিব, আর, তুমি যে ইহার জন্য যত্ন ও পরিশ্রম করিবে, তাহার জন্যও সমুচিত পুরস্কার করিব। বৃদ্ধা সম্মত হইল। তখন তিনি, এক ডাক্তার আনাইয়া, তাঁহার উপর বালকের চিকিৎসার ভার দিলেন, এবং বৃদ্ধার হস্তে কিছু টাকা দিয়া প্রস্থান কবিলেন।

কিছু দিনের মধ্যেই, বালক, চিকিৎসা ও শুশ্রূষার গুণে, সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করিল, তাহার শরীর সবল এবং হস্ত ও পদ কর্মক্ষম হইয়া উঠিল। তখন সে আপন আলয়ে প্রতিগমন করিল, এবং সূত্রধারের ব্যবসায় দ্বারা জীবিকা নির্ব্বাহ করিতে লাগিল।

এই ঘটনার কতিপয় বৎসর পরে, ঐ অশ্বারোহী ব্যক্তি, একদা, রেডিং নগরের মধ্য দিয়া, গমন করিতেছিলেন। এক সেতুর উপরিভাগে উপস্থিত হইলে, অশ্ব, কোনও কারণে ভয় পাইয়া অত্যন্ত চঞ্চল ও নিতান্ত উচ্ছৃঙ্খল হইয়া উঠিল, এবং আরোহীর সহিত নদীতে লম্ফ প্রদান করিল। সে ব্যক্তি সন্তরণ জানিতেন না, সুতরাং, তাঁহার জলে মগ্ন হইবার উপক্রম হইল। অনেকেই সেতুর উপর দণ্ডায়মান হইয়া, এই শোচনীয় ব্যাপার অবলোকন করিতে লাগিল। কিন্তু কেহই, সাহস করিয়া, তাহার উদ্ধারের চেষ্টা করিতে পারিল না