পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রত্যুপকার।

 সেই সেতুর অনতিদূরে, এক সূত্রধার কর্ম্ম করিতেছিল। সে, তদুপরি জনতা দেখিয়া ও কোলাহল শুনিয়া, কর্ম্ম পরিত্যাগপূর্ব্বক, তথায় উপস্থিত হইল, জলপতিত ব্যক্তিকে দেখিবামাত্র জলে ঝম্প প্রদান করিল, এবং অনেক কষ্টে তাঁহাকে লইয়া তীরে উত্তীর্ণ হইল। তদ্দর্শনে, সেতুর উপরিস্থিত ব্যক্তিগণ অত্যন্ত আহ্লাদিত হইল, এবং সূত্রধারের সাহস ও ক্ষমতার যথেষ্ট প্রশংসা করিতে লাগিল।

 এইরূপে প্রাণরক্ষা হওয়াতে, সেই ব্যক্তি প্রাণদাতাকে ধন্যবাদ প্রদান করিয়া কহিলেন, ভাই, তুমি আজ আমার যে উপকার করিলে, তজ্জন্য আমি চির কালের নিমিত্ত, তোমার কেনা হইয়া রহিলাম। এই বলিয়া, তিনি তাহাকে পুরস্কার দিতে উদ্যত হইলেন। তখন সূত্রধার কৃতাঞ্জলি হইয়া কহিল, মহাশয়। আপনি আমায় চিনিতে পারিতেছেন না। কিছু কাল পূর্ব্বে, আমি ভগ্নহস্ত ও ভগ্নপদ হইয়া, কর্দ্দমে পতিত ছিলাম, আপনি সে সময়ে, দয়া করিয়া, আমার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন। আপনার কৃত উপকার আমার হৃদয়ে সর্ব্বক্ষণ জাগরূক রহিয়াছে। অধিক কি বলিব, আপনি আমার পিতা আমি অতি অধম, আমি যে কৃতজ্ঞতা দেখাইবার অবসর পাইলাম, তাহাই আমি যথেষ্ট পুরস্কার মনে করিতেছি, আমার অন্য পুরস্কারের প্রয়োজন নাই।

 এই বলিয়া, প্রণাম করিয়া, সূত্রধার কর্ম্মস্থানে গমন করিল এবং তিনিও তাহার সৌজন্য ও সদ্ব্যবহার দর্শনে প্রীত হইয়া, স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন।