পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পিতৃভক্তি।

সন্তরণ বিষয়ে সেইরূপ দক্ষ হইয়াছিল। সে প্রতিদিন, কর্ম্মে অবসর পাইলেই, জাহাজ হইতে ঝম্পপ্রদান করিয়া সমুদ্রে পড়িত এবং জাহাজের চতুর্দিকে সন্তরণ করিয়া বেড়াইত, ক্লান্তিবোধ হইলে, লম্বমান রজ্জু অবলম্বন করিয়া জাহাজে উঠিত।

 এক দিবস, বায়ুবেগ-বশে সহসা জাহাজ আন্দোলিত হইলে, কোনও আরোহীর অতি অল্পবয়স্কা কন্যা সমুদ্রে পতিত হইল। বেকনর, দেখিবামাত্র, লম্ফ দিয়া সমুদ্রে পড়িল এবং তৎক্ষণাৎ সেই কন্যার বস্ত্র ধরিয়া, তাহাকে জল হইতে ঊর্দ্ধে তুলিল। অনন্তর, সে কন্যাকে বক্ষঃস্থলে লইয়া সন্তরণ করিয়া জাহাজের প্রায় নিকটে আসিয়াছে, এমন সময় দেখিতে পাইল, একটা ভয়ানক হাঙ্গর তাহাকে আক্রমণ করিতে আসিতেছে। দেখিবা মাত্র, বেকনর ভয়ে কাঁপিতে লাগিল। জাহাজের উপরিস্থ সমস্ত লোক অত্যন্ত ব্যাকুল হইল, এবং বন্দুক লইয়া, হাঙ্গরকে লক্ষ্য করিয়া, গুলি চালাইতে লাগিল, কিন্তু কেহই সাহস করিয়া, তাহার সাহায্যের নিমিত্ত, জলে অবতীর্ণ হইতে পারিল না, সকলেই হায় কি হইল বলিয়া, কোলাহল করিতে লাগিল।

 জাহাজ হইতে যত গুলি মারিয়াছিল, তাহাদের একটিও হাঙ্গরের গায়ে লাগিল না। হাঙ্গর ক্রমে ক্রমে সন্নিহিত হইয়া, মুখব্যাদানপূর্ব্বক বেকনরকে আক্রমণ করিতে উদ্যত হইল। তাহার পুত্র অত্যন্ত পিতৃভক্ত ছিল। সে তাহার প্রাণনাশের উপক্রম দেখিয়া, এক তীক্ষ্ণধার তরবারি গ্রহণপূর্ব্বক, সমুদ্রে