পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
আখ্যানমঞ্জরী।

পরেই, সে অতিশয় পীড়িত হইল, সুতরাং প্রতিদিন পরিশ্রম করিয়া যে কিছু উপার্জ্জন করিত, তাহা রহিত হইল, এজন্য তাহার ও সন্তানগুলির কষ্টের পরিসীমা রহিল না। সম্পন্ন ব্যক্তির যেরূপ অনুমতি ছিল, তদনুসারে সে, এমন অবস্থায়, তাঁহার সম্পত্তিব কিয়ৎ অংশ লইয়া, কষ্ট দূর করিতে পারিত। কিন্তু, যেমন অবস্থা ঘটিলে, তাঁহার অনুমতিক্রমে, তদীয় সম্পত্তির কিয়ৎ অংশ লইতে পারি, অদ্যাপি আমার সে অবস্থা ঘটে নাই, এই ভাবিয়া, সে তাহাতে হস্তক্ষেপ করিল না।

 কিয়ৎ কাল পরে সেই স্ত্রীলোক ঐ সম্পন্ন ব্যক্তির অবধারিত মৃত্যুসংবাদ পাইল। কিন্তু, তিনি নিঃসন্তান মরিয়াছেন, অথবা তাঁহার সন্তান আছে তাহার কিছুমাত্র জানিতে পারিল না। এজন্য তখনও সে তাঁহার সম্পত্তিতে হস্তাৰ্পণ করিল না। ক্রমে চারি বৎসর অতীত হইল, তথাপি সে ঐ সম্পত্তি স্পর্শ করিল না। সে মনে মনে এই বিবেচনা করিতে লাগিল, যদিও তাঁহার সন্তান না থাকে, অন্য কোনও উত্তরাধিকারী থাকা অসম্ভব নহে, যদি উত্তরাধিকারীও না থাকে, তাহার কেহ উত্তমর্ণও থাকিতে পারে। আমি তাঁহার সম্পত্তি গ্রহণ করিব, আর তাঁহার উত্তরাধিকারী বা উত্তমর্ণেরা বঞ্চিত হইবেন, ইহা কোনও ক্রমে ন্যায়ানুগত নহে।

 ক্রমে ক্রমে রোগ ও কষ্ট ভোগ করিয়া বৃদ্ধার শরীর অবসন্ন হইয়া আসিতে লাগিল, তথাপি সে সেই সম্পত্তি আত্মসাৎ করা কিংবা সেই সম্পত্তির কিয়ৎ অংশ লওয়া উচিত বিবেচনা করিল না, কিন্তু, পাছে ন্যস্ত সম্পত্তি যথার্থ অধিকারীর হস্তে