পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নিঃস্পৃহতা।

 ইংলণ্ডদেশীয় ডিউক অব মণ্টেগু অতিশয় দয়ালু ও দীনপ্রতিপালক ছিলেন। তাঁহার এই রীতি ছিল, নিরাশ্রয় ব্যক্তিদিগের দুঃখ বিমোচনের নিমিত্ত, সর্ব্বদা প্রচ্ছন্ন বেশে ভ্রমণ করিতেন। একদিন প্রাতঃকালে তিনি ঐ অভিসন্ধিতে এক অনাথমণ্ডলীতে উপস্থিত হইলেন, এবং এক বৃদ্ধা স্ত্রীকে সম্মুখে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, এক্ষণে অত্যন্ত দুঃসময় উপস্থিত, এরূপ সময়ে তুমি কিরূপে দিনপাত কর? যদি আবশ্যক থাকে, বল, আমি তোমার সাহায্য করিতে প্রস্তুত আছি। বৃদ্ধা কহিল, জগদীশ্বরের কৃপায়, আমি স্বচ্ছন্দে আছি, আমার কোনও বিষয়ে অপ্রতুল নাই, যদি দীন দেখিয়া দয়া করিয়া দিতে ইচ্ছা থাকে, ঐ গৃহে এক অনাথা স্ত্রী আছে, তাহাকে সাহায্য দান করুন, অনাহারে তাহার প্রাণ-প্রয়াণের উপক্রম হইয়াছে।

 বৃদ্ধার বাক্য শ্রবণ মাত্র, ডিউক মহোদয় নির্দ্দিষ্ট গৃহে প্রবিষ্ট হইলেন এবং সেই অনাথা উপায়বিহীনা স্ত্রীকে কিছু দিয়া পুনরায় বৃদ্ধার নিকটে উপস্থিত হইয়া, তাহাকে কহিলেন, যদি তোমার আর কোনও প্রতিবেশীর অপ্রতুল থাকে, বল। তাঁহার পুনরায় সেই বৃদ্ধার নিকটে যাইবার উদ্দেশ্য এই যে, তাহাকেও কিছু দান করিবেন এবং আর কাহারও অপ্রতুল আছে কি না জিজ্ঞাসা করিলে, সে অবশ্যই আপন অবস্থা নিবেদন করিবে।