পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বর্ব্বরজাতির সৌজন্য।
৫৯

পুরস্কার অঙ্গীকার করিয়া, কুটীরস্বামীকে কহিলেন, তুমি আমাকে আমার আলয়ে পঁহুছাইয়া দাও।

 তাঁহার প্রার্থনা শ্রবণ করিয়া, সে ব্যক্তি কহিল, অদ্য সময় অতীত হইয়াছে, আপনি, কোনও ক্রমেই এ রাত্রিতে নির্বিঘ্নে আপন আলয়ে পঁহুছিতে পারিবেন না, কল্য প্রাতে আমি আপনাকে লোকালয়ে পঁহুছাইয়া দিব, আজ আমার কুটীরে অবস্থিতি করুন, আমার যা কিছু সংস্থান আছে, আপনার পরিচর্য্যায় নিয়োজিত হইবে। ইয়ুরোপীয়, নিতান্ত নিরুপায় ভাবিয়া, সে রাত্রি সেই কুটীরে অবস্থিতি করিলেন। কুটীরস্বামী, সাধ্যানুসারে, তাঁহার আহার ও শয়নের ব্যবস্থা করিয়া দিল। রজনী প্রভাত হইলে, সে ব্যক্তি, ইয়ুরোপীয়ের সঙ্গে কিয়ৎ দূর গমন করিল, এবং যে পথে গেলে, তিনি অক্লেশে ও নিরুদ্বেগে, আপন আলয়ে পঁহুছিতে পারিবেন, তাহা দেখাইয়া দিল।

 পরস্পর বিদায় লইবার সময় উপস্থিত হইলে, আমেরিকার অসভ্য, ইয়ুরোপীয় সভ্যের সম্মুখবর্ত্তী হইয়া, কিয়ৎ ক্ষণ, অবিচলিত নয়নে, তাঁহার মুখ নিরীক্ষণ করিল, অনন্তর, ঈষৎ হাস্য সহকারে ইয়ুরোপীয়কে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কি পূর্ব্বে আর কখনও, আমায় দেখেন নাই? তিনি, তাহার দিকে সাভিনিবেশ দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া তৎক্ষণাৎ চিনিতে পারিলেন, দেখিলেন, কিছু দিন পূর্ব্বে, যে ব্যক্তি ক্ষুধার্ত্ত ও তৃষ্ণার্ত্ত হইয়া, তাঁহার আলয়ে গিয়া, জলদান দ্বারা প্রাণদান প্রার্থনা করিয়াছিল, এবং তিনি সেই প্রার্থনা পরিপূরণ না করিয়া, যৎপরোনাস্তি অবমাননা পূর্ব্বক, যাহাকে তাড়াইয়া দিয়াছিলেন, সেই