বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

 আজকাল ‘অস্পৃশ্যতা’ ব্যাপারটি আবার একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে পরিণত হইয়াছে! একজন পারিয়া যদি একবারটি তোমার ঘরের চৌকাঠ ডিঙায় তাহা হইলেই অমনি ঘরের খাবার জল অপবিত্র বলিয়া সব ফেলিয়া দিতে হয়, কিন্তু বরফ লেমনেডের বেলায় তাহাদের তৈয়ারী হইলেও দিব্য আরামে পান করা চলে। সমাজের কেহ কোন বিশেষ সম্মান লাভ করিলে ভোজের আয়োজন হয়, পেলেটীর বাড়ী খানার বন্দোবস্ত হয়, সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা তাহাতে যোগদান করেন, তাঁহাদের নাম খবরের কাগজে বাহির হয়; তবুও কিন্তু বাবুদের জাত যায় না। কিন্তু যদি বিবাহে কি শ্রাদ্ধে কেউ মুসলমান কি তথাকথিত নীচ জাতি হিন্দুর সহিত একত্রে খাইল, অমনি সমাজ খড়্গহস্ত; তাহাকে জাতিচ্যুত করিয়া তবে নিশ্চিন্ত হয়। ইহার মধ্যে “যুক্তি, তর্ক কিম্বা সহজ বুদ্ধি” কোথাও আছে কি?

 জাতিপ্রথা একেবারে উঠাইয়া দেওয়া যদি আপাততঃ অসম্ভব বলিয়া বোধ হয়, তবে অন্ততঃ ইহার বাঁধাবাঁধি একটু শিথিল করিলে ক্ষতি কি? সমাজে যদি এত অমিল থাকে, সামান্য সামান্য চুলচেরা প্রভেদ লইয়া কেবল দলাদলি ও ঝগড়া লইয়াই যদি নিয়ত ব্যস্ত থাকি, তাহা হইলে দেশ কি আপনা আপনি স্বাধীন ও শক্তিমান হইয়া উঠিবে? জাতিভেদপ্রথাই যে আমাদের দুর্দ্দশার একটি প্রধান কারণ তাহা ‘প্রবাসী’ যথার্থই নির্দ্দেশ করিয়াছেন—

 “আমাদের হীনতার কারণ সম্বন্ধে সকলের স্পষ্ট ধারণা নাই। অনেকে এ বিষয়ে কিছু জানেন না, চিন্তাও করেন না। অনেকে পরিষ্কার করিয়া এরূপ না ভাবিলেও তাঁহাদের মনের মধ্যে যেন এই রকম একটা ধারণা আছে, যে আমাদের হীনতাটা বাহিরের কতকগুলি লোক বিদেশ হইতে আসিয়া আমাদের ঘাড়ে চাপাইয়া দিয়াছে, আমাদের ইহাতে