পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গালী-মরণের পথে 19\9 দৈনিক আয় মাত্রy৬ পয়সা ইহা যোগাইতে পারে ? ফলকথা, শিশুদিগের অস্থি ও মাংস গঠনের একমাত্র উপযুক্ত খাদ্য দুগ্ধ । আমি বন্যপ্রাবিত রাজস্যহী জেলার আত্রাই অঞ্চল হইতে নদীয়া, যশোহর ও খুলনার গো-জাতির দুর্দশ দেখিয়া অশ্রুপাত না করিয়া থাকিতে পারি না। ইহাদের আকৃতি যেমন খর্ব্ব, দেহ তেমনি জীর্ণশীর্ণ কঙ্কালসার । খাদ্যাভাব ও পালনে অধত্ব ইহার প্রধান কারণ। এখন আর গোচারণের মাঠ নাই , তাহা ছাড়া গৃহস্থগণের সুবহেলা, শ্রমবিমুখত ও তাচ্ছিল্য এই দুর্দশার জন্য দায়ী আমার নিজ গ্রামের ৬০ বৎসরের পূর্বের অবস্থা নথদর্পণের ন্যায় দেখিতেছি । তখন দুধের সের দুই পয়স ছিল এবং প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়ীতে গোয়ালভরা সবলকায় গরু থাকিত । একজন অশীতিবর্ষ বৃদ্ধের মুখে শুনিলাম ১২৬৫ সালে তিনি ক্রিয়া কর্ম্মের জন্য ৫২–৬২ টাকা মণ মূল্যে ছানা ক্রয় করেন এবং ইহারও কিছু পরে খাট স্বগন্ধযুক্ত স্কৃত টাকায় ১০ পাচ পোয়া করিয়া মিলিত । তিনি বলিলেন—এবং আমারও এই ধারণা ও অভিজ্ঞতা— যে এখনকার যুবকগণ ও কুলবধূরা গরুর জাব দেওয়া, গোয়াল পরিষ্কার করা —এক কথায় যাহাকে গো-সেবা বলে—তাহ এক প্রকার ছাড়িয়া দিয়াছে। তখন আবার প্রত্যেকের বাড়ীতে তিনটা চারিটা করিয়া বিচালীর গাদা গরুর খোরাকীর জন্য মজুত থাকিত । এখনকার স্কুল-কলেজের পড়া ছেলেরা গো-সেবা করিতে নিজেকে হেয়ঞ্জান করে, কাজেই দুধ খাইতে পায় না। এক ভ্রান্তিমূলক সংস্কার যে, গরু অনেক জবাই হয় বলিয়াঁ দুধের পরিমাণ কমিতেছে. ইংরাজ জাতির মত গো-খাদক জাতি আর নাই ; কিন্তু ইংলণ্ডে গরুর যত্ব ও পালন কত বেশী তাহা বলা যায় না । সেখানে গরুর জন্য ঘাসের ও গাজর এবং প্রকাগু মূলা জাতীয় “Mangel Wurzel” প্রভৃতির স্বতন্ত্র ।