বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার
২৫

এই প্রধান কথা কয়েকটি স্মরণ রাখিয়া অবতীর্ণ হইতে হইবে, নচেৎ কৃতকার্য্য হইবার আশা সুদূরপরাহত।[]

 এই বাণিজ্য-দারিদ্র্যের কথা ভাবিলে সত্যই প্রাণে আঘাত লাগে। বাঙ্গালা দেশে প্রায় ৮২টি পাটের কল কিন্তু ইহার একটিরও মালিক বাঙ্গালী নহে। বাঙ্গালী স্বদেশী হইলেন। কিন্তু এই ভাব সংরক্ষণের জন্য বোম্বাইএর দিকে “হাঁ” করিয়া তাকাইয়া রহিয়াছেন। আজ পঞ্চাশ বৎসর, শত বাধা বিঘ্ন প্রতিযোগিতা অতিক্রম করিয়া বোম্বাই, অধিবাসি গণ কাপড়ের কল স্থাপন করিয়াছেন ও তাহার ফললাভ করিতেছেন। আমাদেরও কি তাহাই কর্ত্তব্য নহে? আজ আমরা এমন অধম হইয়া পড়িয়াছি যে বার্মিংহাম আজ যদি বিরূপ হইয়া বসেন, নিবের অভাবে কালই আমাদের সাধের কলমপেশা ঘুচিবে। এতদিন আমরা ম্যান্‌চেষ্টারের দিকে তাকাইয়া থাকিতাম। ম্যান্‌চেষ্টার আনাদিগকে সাজাইলে সাজিতান নচেৎ—বস্ত্রহীন, কিন্তু বিধাতার অনুগ্রহে আজ আমরা দেশীয় জিনিষে লজ্জা নিবারণে অনেকটা সমর্থ হইয়া উঠিতেছি। ইহা আশার কথা সন্দেহ নাই। মৃত জাতির প্রাণ আজ যে উৎসাহরসে সঞ্জীবিত হইবার সূচনা দেখা যাইতেছে, তাহাতে কাহার হৃদয়

  1. এই প্রবন্ধটি ১৯০৯ খৃষ্টাব্দে লেখা হয়। তাহার পর এই ১১ বৎসরে অনেক পরিবর্ত্তন হইয়াছে। কয়েকজন গ্রাজুয়েট পুরাতন মার্গ ছাড়িয়া ব্যবসা আরম্ভ করিয়া যথেষ্ট কৃতকার্য্যতা দেখাইয়াছেন। বিশেষতঃ বর্ত্তমান যুদ্ধের নানা কুফলের মধ্যে একটা সুফল এই ফলিয়াছে যে বিলাতী মাল বেশী আসিতে না পারায় আমাদের দেশের কল কারখানাগুলি অধিক লাভে জিনিষ বিক্রয় করিতে পারিতেছে। স্বদেশী কারখানার মধ্যে কাপড়ের কল, চর্ম্ম পরিষ্কারের কারখানা, টাটার লৌহ কারখানা, বেঙ্গল কেমিক্যাল এণ্ড ফার্ম্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কসের মত রাসায়ণিক কারখানা প্রভৃতি যথেষ্ট উন্নতি লাভ করিয়াছে এবং যে সকল জিনিষ পূর্ব্বে এদেশে প্রস্তুত হইত না তাহার মধ্যে কিছু কিছু এক্ষণে এদেশেই প্রস্তুত হইতেছে। ইহা আশা এবং আনন্দের বিষয় সন্দেহ নাই।