পাতা:আজকের আমেরিকা.djvu/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৬
আজকের আমেরিকা

সংগে খাওয়া শেষ করে গল্প করছিল। সেসব কথায় দুঃখের ছায়া নেই, হালকা সরস আনন্দময় কথাবার্তা। মাঝে মাঝে তার দু-একটা আমারও কানে আসছিল―ম্যেকিরুনি, জো লুই, খেলার কথা, সুন্দরী বালিকাদের কথা ইত্যাদি। তার মানে ওই রেস্তোরাঁয় বসে যারা খাচ্ছিল তাদের কেউই বেকার নয়। যখন লোকের কাজ থাকে, অভাব তার থাকে না। (কথাটা শুধু আমেরিকাতেই খাটে), মনে তখন তার হাসিখুশির কথাই আসে। কর্মের গাম্ভীর্য দিনের শেষে কাজ শেষ হবার সংগে সংগেই শেষ হয়ে যায়। এখন কাজের কথা, দায়িত্বের কথা আর ওদের মনে নাই, তাই ওরা এখন সুখী। তারা এটাও ভাল করে জানে, যখন তারা বুড়ো হবে তখন তারা প্রত্যেকে পেনশন পাবে। পেনশন পাবে, তা দ্বারা তাদের ভরণ পোষণ চলবে, তারপর ‘হেম এণ্ড এগ’ আন্দোলন তো চলেছেই। তাই আমেরিকার মজুর কাজ করতে পারলেই সুখী। যারা কাজকর্ম খুঁজে পায় না বা যাদের মাঝে নূতন ভাবের সন্‌চার হয়েছে, তারাই অবনত ও বিষণ্ণ মুখে জীর্ণ বসনে আবৃত হয়ে পথে চলেছে। পাশ্চাত্য জাতকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারা যায় না। এদের মনের বল যে কত তা আমাদের ধারণাতীত। আমরা অনেক সময়েই পেটের নজির দিয়ে নিজেদের দুর্বলতাকে সমর্থন করি, এজন্য কাল্পনিক সম্মানের নজির দিতেও কসুর করি না; কিন্তু ওদের সেসব নাই।

 রেস্তোরাঁর দরজার সামনে একটু প্রকাশ্য স্থানেই বসেছিলাম এবং ওয়েটারকে দুধ আনতে বলেছিলাম। ওয়েটার গেলাসে করে ঠাণ্ডা দুধ এনে দিয়েছিল। ঠাণ্ডা দুধ খেতে চাইলে তার সংগে সরু খড়ের নল দেওয়া হয়। আমি ঠাণ্ডা দুধ খেতেই পছন্দ করি। খাচ্ছিলাম আর নানা কথা ভাবছিলাম। কিন্তু দরজার সামনে বসে নির্বিকার চিত্তে নিঃসংকোচে দুধ খাচ্ছি দেখে অনেকেই আমাকে