পাতা:আজকের আমেরিকা.djvu/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৫০

আজকের আমেরিকা

দেশের এবং আমার জাতের কথা। যতই ভাবছিলাম, ততই রাগ হচ্ছিল, বাইরে যাবার মোটেই ইচ্ছা হচ্ছিল না। কেউ আমায় বিদায় দিতে আসেনি, কেউ আমার প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে বসেও ছিল না, তবে কেন জাহাজের চারিদিকে ঘুরে বেড়ান।

 কেবিনেই হাত মুখ ধোয়ার গরম ও ঠাণ্ডা জলের ব্যবস্থা ছিল। হাত মুখ ধুয়ে ভাবলাম, গিয়ে দেখি, হয়ত রাজা ষষ্ঠ জর্জ আমেরিকা থেকে ফিরে আসছেন। এই জেটিতেই তাঁর জাহাজ ভিড়বে। কেবিন হতে বার হবার পরই একজন লোক আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “আপনার নাম রামনাথ?” বললাম, “হ্যাঁ, কি দরকার?” সে বলল, “এই চিঠিটা আপনার বন্ধু হোর‍্যাসিও দিয়েছে, গ্রীক ভাষায় লিখেছে বলেই পড়ে শোনাতে এসেছি।”

 পত্রে ছিল, তিনি আমেরিকা যাবেন বলে আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা রাখতে পারলেন না। কারণ শীঘ্রই ইউরোপে যুদ্ধ আরম্ভ হবে, তাই তিনি কন্‌টিনেণ্টে চলে যাচ্ছেন। যদি পারেন, তবে ভারতে গিয়ে কলিকাতার ঠিকানায় আমার সংগে দেখা করবেন। চিঠিতে এ কথাও ছিল যে, পত্রবাহকও গ্রীক,―লোক ভাল; তার সংগে আমি আলাপ করতে পারি। পত্রটা হাত থেকে নিয়ে দেখলাম, সেটা গ্রীক ভাষাতেই লেখা বটে এবং তারই সেই দস্তখত! আমরা দুজনে জাহাজের ডেকে গেলাম; দেখলাম রাজা জর্জকে অভ্যর্থনা করবার জন্য উপরে বিরাট আয়োজন চলছে। জাহাজ তখন ডক্‌ ছাড়েনি। আমি কাস্টম অফিসারের প্রসংগই শুরু করলাম। ভদ্রলোককে বুঝিয়ে বললাম, দোষটা আমাদের জাতেরই; কারণ আমরা পরাধীন। ভদ্রলোক বললেন, “আপনাদের জাতের দোষ আর থাকবে না।” কথাটা আমার খুব ভাল লাগল।