স্বাধীন ভারতের ত্রিবর্ণ-রঞ্জিত পতাকা প্রথম মণিপুর ও নাগা পাহাড়ের ভূমিতে প্রোথিত হইয়াছে। আমরা স্বাধীন—স্বাধীন ভারতের মাটিতে দাঁড়াইয়া আছি। কয়েকটি মণিপুরী যুবক আমাদের সহিত সহযোগিতা করিতেছে। কিন্তু সাধারণ লোকের মনে কোনরূপ রাজনৈতিক চেতনা নাই। স্বাধীনতা ও অধীনতার মধ্যে পার্থক্য তাহারা বুঝে না।
সন্ধ্যা হইতে ভীষণ মশার আক্রমণ হইল। লাল্তুই বলিল—সেই ভদ্রলোক রাত্রে আহারের নিমন্ত্রণ করিয়াছেন। আজ শরীরটা ভালো মনে হইতেছে না—নিমন্ত্রণ বাদ দেওয়াই ঠিক হইল।
লাল্তুই-এর নিকট মণিপুরের কাহিনী শুনিলাম। প্রায় ৫৩ বৎসর পূর্বে (১৮৯০ খৃষ্টাব্দে) মণিপুরের রাজা কুলচন্দ্র ইংরেজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। তাঁহার সেনাপতি টিকেন্দ্রজিত সম্বন্ধে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। এই বিদ্রোহ সফল হয় নাই।
২রা এপ্রিল ১৯৪৪:
আজ পর্য্যবেক্ষণের জন্য এরোপ্লেন যাইতেছে। আমাকে সঙ্গে যাইতে হইবে। আমাকে কোহিমা রণাঙ্গনে রিপোর্ট করিতে হইবে।
আকাশের বুক চিরিয়া এরোপ্লেন্ চলিতেছে। অনেক নীচে লোগতাক্ হ্রদ-রৌদ্রের আলোকে ঝক্ঝক্ করিতেছে। চারিদিকে নীল পাহাড়ের মধ্যে রূপালি হ্রদের জলরাশি ছবির মত দেখাইতেছে। হ্রদের জলের মধ্যেও কয়েকটী পাহাড় মাথা তুলিয়াছে।
পাহাড়ের পর পাহাড়ের শ্রেণী—ঘন সবুজ ও ঘন নীল হইতে ক্রমে ক্রমে ফিকা নীলে পরিণত হইয়াছে। পাহাড়ের মধ্য দিয়া আঁকিয়া বাঁকিয়া রূপালী চাদরের মত মণিপুর নদী বহিয়া গিয়াছে।