পাতা:আজাদ হিন্দ ফৌজ - দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আজাদ হিন্দ ফৌজ

চিরকালের জন্য দেশত্যাগী হইলেন। রাসবিহারীর জাপান পৌঁছাইবার এক মাস পরে বৃটিশ সরকার যখন বুঝিলেন তিনি জাপানে আছেন, তখন জাপান সরকারকে বৃটিশ সরকার তাঁহাকে ভারতে পাঠাইয়া দিবার অনুরোধ করেন। জাপান সরকারও ইহাতে রাজী হন।

 সেই সময় একদিন রাসবিহারী জাপানী পোষাক পরিয়া ছদ্মবেশে রাস্তায় বাহির হন। সেই রাত্রে বেশ তুষারপাত হইয়াছিল। পথগুলি তখনও বরফে আবৃত ছিল। রাসবিহারী গলিপথ ধরিয়া তদানীন্তন এক মামুলী মন্ত্রীর গৃহে উপস্থিত হন। মন্ত্রিকন্যা তাঁহাকে সাদর সম্ভাষণ করেন। তিনি মন্ত্রিকন্যার সহিত যখন চা-পান করিতেছিলেন তখন জানিতে পারিলেন যে, দরজায় পুলিস দাঁড়াইয়া আছে। রাসবিহারী বুঝিলেন, এবার তাঁহাকে বুঝিয়া কাজ করিতে হইবে। তিনি ভাল করিয়াই জানিতেন, যদি তিনি ধৃত হন তবে মৃত্যু সুনিশ্চিত।

 পিছন দরজা দিয়া তিনি মন্ত্রিকন্যার সহিত নিকটস্থ ঘেইসা বালিকাদের আড্ডায় গিয়া তাহাদের পোষাক পরিধান করিয়া এবং পরচুল লাগাইয়া ঘেইসা বেশে থাকিতে লাগিলেন। তাঁহাকে ছয় মাস কাল জাপানী পুলিস খুঁজিয়া পায় নাই। অবশেয়ে তিনি ব্লেক-ড্রেগনদের সাহায্যে জাপানী প্রজা হইতে সক্ষম হন। ইহারা জাপান সরকারের বিরুদ্ধবাদী দল।

 তিনি ঐ অঞ্চলের বিপ্লবীদের সংঘবদ্ধ করিলেন এবং চীনদেশস্থ জার্ন্মাণদিগকে তাঁহার অভিপ্রায় জ্ঞাপন করিলেন। সাংহাই-এর জার্ম্মাণ কন্সালের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া ভারতীয় বিপ্লবীদের কর্তব্য সম্বন্ধে অনেক পরামর্শ করিলেন। ১৯১৫ সালের অক্টোবর মাসে সাংহাইতে একজন চীনার দ্বারা অনেকগুলি পিস্তল ও টোটা ভারতের বিপ্লবে সহায়তার জন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু বৃটিশ পুলিস সন্ধান পাইয়া উহা বাজেয়াপ্ত করে। বৃটিশ সরকারের অনুরোধক্রমে জাপ সরকার তাঁহাকে পাঁচদিনের মধ্যে সাংহাই ত্যাগ করিতে বাধ্য করেন। অতঃপর তিনি আট বৎসর আত্মগোপন করিয়া ছিলেন।