পাতা:আজাদ হিন্দ ফৌজ - দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আজাদ হিন্দ ফৌজ
১৭

তাঁহাদের বাহিনী আত্মসমর্পণ করেন। পরে মেজর ফুজিয়ারা এই ভারতীয় বাহিনীর সর্ব্ববিধ দায়িত্ব সর্ব্বাধিনায়ক মোহন সিংএর হস্তে সমর্পণ করেন। ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে নেতাজী সুভাষচন্দ্রের সহিত শাহ্ নওয়াজের সাক্ষাৎ হয়। মেজর জেনারেল শাহ্ নওয়াজ তাঁহার কর্ম্মজীবনের বিবৃতি প্রসঙ্গে বলিয়াছেন যে নেতাজীয় সহিত আমার সাক্ষাৎএর পূর্ব্বে আমি কেবল সামরিক শিক্ষাই লাভ করিয়াছিলাম; রাজনীতি বা অন্যান্য বিষয়ে আমার বিশেষ কোন জ্ঞান ছিল না। শৈশব হইতে যে পারিপার্শ্বিক আবেষ্টনের মধ্যে আমি প্রতিপালিত হইয়াছিলাম তাহাতে আমার মানসিক বৃত্তিগুলি একজন তরুণ ইংরাজ অফিসারের মতই গঠিয়াছিল এবং আমি ভারতবর্ষকে ইংরাজের দৃষ্টি লইয়াই দেখিতে শিখিয়াছিলাম, কিন্তু নেতাজীর সংস্পর্শে আসিয়া আমার দৃষ্টিপথ হইতে সে স্বপ্নের কাজল মুছিয়া গেল। দাসত্বের মোহমুক্ত দৃষ্টি মেলিয়া আমি প্রথম আমার জন্মভূমিকে ভারতবাসীর দৃষ্টি লইয়া দেখিলাম।”

 দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গে মেজর জেনারেল শাহ্ নওয়াজের জীবনে এক অভূতপূর্ব্ব পরিবর্ত্তন ঘটিল। জন্মভূমির দাসত্ব শৃঙ্খল এবং ৪০ কোটি ভারত বাসীর পরাধীনতার বন্ধন মুক্ত করিবার জন্য তিনি ভারতের জাতীয় বাহিনী আজাদ হিন্দ ফৌজের একটি দায়িত্বপূর্ণ কার্যভার গ্রহণ করেন। ১৯৪৪ খৃঃ ইম্ফল অভিযান কালে তিনি ‘বসু’ বিগ্রেডের অধিনায়করূপে ইংরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। জন্মভূমির স্বাধীনতা অর্জ্জনে তিনি এতদূর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হইয়াছিলেন যে এই যুদ্ধে তিনি তাঁহার সহোদর ভ্রাতার বিরুদ্ধেও অস্ত্রধারণ করিতে কুণ্ঠিত হন নাই। আজাদ হিন্দ ফৌজে তিনি মেজর জেনারেলের পদে উন্নীত হন; এবং জাতীয় বাহিনীর বিজয় গৌরবের কীর্ত্তি স্বরূপ তিনিই প্রথম বৃটিশ শাসিত মণিপুর, কোহিমা, প্রভৃতি প্রদেশে জাতীয় পতাকা উড্ডীন করেন।