পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পণ্ডিত, মুখ, শ্রী পুরুষ, সকলকেই অধিকার করিয়াছেন। মেঘনাদবধ, বুত্রসংহার এবং কুরুক্ষেত্র, এখনও শক্তিশালী হয় নাই। কখনও হইবে কি না। সন্দেহ । আর যাহার “জানালার ধারে”, “কপাটের ফঁাকে”, “পর্দার আড়ালে”, “আকাশ পানে”, “আর বলিব না” প্রভৃতি উদ্ভূট নাম দিয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কবিতা লেখেন, তাহদের কুল কিনারাই খুজিয়া, পাই না । এইরূপ কবিতা, এমন কি মাইকেল প্রভৃতি পর্য্যন্ত পড়িতে পড়িতে মনে হয়,-- এসব বাহিরের লোকের লিখিত বাহিরের কথা, কৃত্তিবাসাদির ন্যায় এবং সেই গঙ্গার বন্দনাদির ন্যায়। ঘরের লোকের লিখিত ঘরের কথা নয়। বাহিরের কথা লিখিলে যে মহাপাতক হয় তাহা নয় ; কিন্তু বাহিরের কথা ঘরের কথার মতন করিয়া না লিখিলে মহাপাতক হয় বৈ কি । বাঙ্গালা সাহিত্য যখন এখনও বৈদেশিকতায় পরিপূর্ণ, তখন কেমন করিয়া বলি যে, বাঙ্গালী স্বদেশভক্ত ও স্বদেশপ্রিয় হইয়াছে ? কাজেই বলিতে হয়, এই যে স্বদেশী সুর শুনা যাইতেছে, ইহা জোর করিয়া গাওয়া সুর। বাঙ্গালা সাহিত্যে এখনও বৈদেশিকতার বিরাট মুক্তি দেখিতেছি। তাই বলিতে বাধ্য হইতেছি যে, স্বদেশী আন্দোলনের সময় এখনও বঙ্গে হয় নাই। বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া আমি বিবাহ করিয়াছিলাম। কাজেই যে সকল মহিলাকে কৃত্তিবাসাদি পড়িয়া শুনাইতাম, তাহদের মধ্যে আমার সহধর্ম্মিণী থাকিতেন না। এখন তিনি নিজে একটু একটু পড়েন। বলেন রামায়ণ, মহাভারত যতবারই পড়ি, ততবারই ভাল লাগে । অন্য বই একবার পড়িলে আর ভাল লাগে। না । এইজন্য আমার অন্দর মহলে, অর্থাৎ যেখানে আমার পত্নীর প্রভুত্ব, সেখানে নবেলের বড় একটা দৌরাত্ম্য নাই। অমিত্রাক্ষর ছন্দের উপর তিনি কিছু বিরক্ত। বোধ হয় স্কুল কলেজে পড়া স্ত্রীলোক ছাড়া অপর সকল স্ত্রীলোকই কিছু ? বিরক্ত । আমারও উহা মিষ্ট লাগে না । আমার মনে হয়, ঐ ছন্দে কবিতা লিখিয়া মাইকেল একটা জঞ্জাল ঘটাইয়া গিয়াছেন। সেই সেকালের পয়ার ও ত্রিপদী আমার বড়ই ভাল লাগে। কিন্তু এখন ঐ সকল সোজা সরল ছন্দ কিছু ঘূণিত, মূর্থের ছন্দ বলিয়া উপেক্ষিত । হেমচন্দ্র মিষ্ট পয়ার লিখিতে পারিতেন । মাইকেলের হেঁপায় না পড়িলে বোধ হয় সমস্ত বৃত্রসংহারখানা পয়ারে লিখিয়া বঙ্গে যথার্থই বাঙ্গালীর প্রিয় বাঙ্গাল কাব্য একখানা রাখিয়া যাইতেন। আর সেই কাব্যাখানাকে বাঙ্গালী জাতীয় (National ) এবং স্বদেশী কাব্যজ্ঞানে পুলকিত হইত। রঙ্গলালের পদ্মিনী উপাখ্যান এবং দীনবন্ধুর সুরধুনী কাব্য পুরাতন ছন্দে লেখা। পড়িতে পড়িতে সকলেই আমাদের ঘরের দ্বারা লিখিত ঘরের কথা বলিয়া অনুভব করে । রঙ্গলালের কাব্যে হিন্দু রমণীর সতীত্বরক্ষার্থ আপন প্রাণ বিসর্জনের কথা সেকালের ধরণে লিখিত হইয়াছে। আর সুরধুনী কাব্যের ত কথাই নাই। আমাদের, 8ግ