পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হোটেলের সর্বোৎকৃষ্ট গৃহে বাস করছেন, তখন প্যারিসে হুলস্থল পড়ে গেল এবং আমারও তীর সঙ্গে আলাপ করবার জন্য মন চঞ্চল হয়ে উঠল। আমি তখন কলেজডি-ফ্রান্সে প্রোফেসার বাৱনুফের কাছে সংস্কৃত শিক্ষা করতাম, এবং যখন দেখলাম যে "নবাগত ভদ্রলোকটি আমারই এই প্রোফেসারের কাছে পরিচয়-পত্র নিয়ে এসেছেন, তখন তার সঙ্গে আলাপ হ’তে বড় বেশী বিলম্ব হ’ল না । প্রোফেসার বারানুফ একদিন আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং তারপর থেকে তঁর সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্ঠতা হ’ল । তিনি হচ্ছেন তোমার পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর। স্বারকানাথ সংস্কৃত ভাষায় পণ্ডিত না হ’লেও সংস্কৃত সাহিত্য-জ্ঞান তার বেশ ছিল। প্রথম যখন তঁকে আমি দেখি তখন তিনি ইনষ্টিটু্যিটু-ডি-ফ্রান্সে প্রোফেসার বারনুফের সঙ্গে কথা কইছিলেন। প্রোফেসার তাকে নিজের ভাগবতপুরাণের উৎকৃষ্ট ফরাসী তৰ্জমার বইখানি উপহার দিলেন। এক দিকে সংস্কৃত শ্লোকগুলি, অপর দিকে ফরাসী তর্জমাগুলি ছাপান ছিল। দ্বারকানাথ তার সুগঠিত শু্যামল অঙ্গুলীগুলি ফরাসী তৰ্জমার পাতার উপর রেখে নিশ্বাস ফেলে বল্লেন, “আহা ! এইগুলি যদি আমি পড়তে পারতাম !” তার স্বদেশের প্রাচীন ভাষা জানিবার জন্য তঁায় তেমন আগ্রহ ছিল না, যত ফরাসী ভাষার জন্য ছিল । যখন তিনি শুনলেন যে আমি সংস্কৃত ভাষা শিখবার জন্য কিরূপ আগ্রহান্বিত, তখন আমার প্রতি তার একটা আকর্ষণ হ’ল । তিনি প্রায়ই আমাকে নিমন্ত্রণ করতেন এবং আমিও গিয়ে সারা সকালটা তার কাছে প্রায়ই কাটিয়ে আসতাম। ভারতের নীতি প্রভৃতি নানা বিষয়ে তার সঙ্গে আমার অনেক কথা হ’ত । তিনি অত্যন্ত সঙ্গীতপ্রিয় ছিলেন এবং ইটালীয় ও ফরাসী সঙ্গীত খুব পছন্দ করতেন। তিনি গান করতেন। আর আমি সেই গানের সঙ্গে পিয়ানো বাজােতাম-এই ভাবে আমাদের দিনগুলি বেশ আনন্দে কেটে যেত। তিনি বেশ সুকণ্ঠ ছিলেন। একদিন আমি তাকে বল্লাম একটি খাটি ভারত-সঙ্গীত গাইতে, তাতে তিনি যে গানটি প্রথমে গাইলেন, সেটা ঠিক ভারতীয় নূয়, পারসিক গজল, এবং আমিও তাতে বিশেষ কোন মাধুর্য্য পেলাম না। খাটি ভারত-সঙ্গীত গাইবার জন্য পুনঃ পুনঃ অনুরোধ করায় তিনি মৃদু। হেসে বল্লেন, “তুমি তা উপভোগ করতে পারবে না।” তারপর আমার অনুরোধ রক্ষার জন্য একটি গান নিজে বাজিয়ে গাইলেন । সত্য বলিতে কি, আমি বাস্তবিকই কিছু উপভোগ করতে পারলাম না। আমার মনে হ’ল যে, গানে না আছে স্বর, না আছে ঝঙ্কার, না আছে সামঞ্জস্য। দ্বারকানাথকে এই কথা বলায় তিনি বল্পেন, “তোমরা সকলেই এক রকমের। যদি কোন জিনিস তোমাদের কাছে নতুন ঠেকে। -বা প্রথমেই তোমাদের মনোরঞ্জন করতে না পারে, তোমরা আমনি তার প্রতি SS