পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা লাভ করিয়া বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অনেকে সিদ্ধ।কাম শিক্ষক আছেন, আপনিও দিনকতক সখের শিক্ষকতা করিয়াছি, আর পাঁচটি পুত্র কন্যা থাকাতে সর্ব্বদাই শিক্ষকতা করিতে হয়, কিন্তু এ পর্য্যন্ত সেই পিতৃদেবের মত শিক্ষক আমি আর দেখিলাম না। পুত্র পিতাকে সার্টিফিকেট দিতেছে, সে সার্টিফিকেটের মূল্য বড় কম, তাহা বুঝি । কিন্তু তাহার জীবনীর দশ কথা লিখিতে বসিয়াও যদি এই কথাটা না লিখি, তাহা হইলে মহা অধর্ম্ম হয়, মনে করি। তাহার গুণের সম্যক পরিচয় দেওয়া হইল না বলিয়া অধর্ম্ম নহে, এই কথাটা ছাড়িয়া দিলে জীবনী লেখার যে প্রধান উদ্দেশ্য তাহাই বিফল হইয়া যায়। একটি জীবনের ঘটনা হইতে দশটা জীবন আংশিক গঠিত হইতে পারে। আজি কালি শিক্ষকতা দুর্লভ সামগ্রী হইয়াছে। পিতা পিতৃব্য প্রভৃতি বালকগণের স্বাভাবিক শিক্ষক। তঁহারা অনেক সময়েই আপনাদের 'কার্য্য' লইয়া ব্যস্ত থাকেন । পুত্রের শিক্ষা দানরূপ আকার্য্যে কাজেই তাহারা মনোযোগ দিতে পারেন না। স্কুলের শিক্ষকের ডাইরেক্টার বা প্রিনসিপল কি বলেন, কি করেন, কি ভাবে কোন কার্য্য করিতে বলেন, সেই চিন্তাতেই আকুল ; ছাত্রগণ কোন কথা প্রকৃত প্রস্তাবে শিখিতেছে কিনা, তাহা অনুধাবন করিবার সময় তাহদের নাই, প্রবৃত্তি র্তাহাদের হয় না । কাজেই ছেলেপিলের শিক্ষা এখন একটা বিশেষ বিড়ম্বনার ব্যাপার হইয়া উঠিয়াছে। পিতার বিচার আচার, আমোদ প্রমোদ, শিক্ষা পরীক্ষা প্রভৃতি শত কার্যা থাকিলেও, আমাকে শিক্ষাদান র্তাহার সকবর্গ প্রথম এবং সব প্রধান কার্য্য বলিয়া মনে করিতেন । কাছারির সময় ছয় ঘণ্টা ছাড়া, বাকি আঠার ঘণ্টা, আমি নিয়তই তাহার সঙ্গে থাকিস্তাম । একত্রে স্নান করিতাম, একত্রে আহার করিতাম, একত্রে শয়ন করিতাম, তঁহার সেই সন্ধ্যাকালের সরগরম মজলিসের আমি বিনীত অথচ নিয়ত শিশু সভ্য ছিলাম। কখন বলেন নাই যে, “অক্ষয় তুমি ওঘরে গিয়া পড়গে।” গান গল্প হাসি মঙ্করা, শিশু বধিয়া সমানে ভোগী হইতে পারিতাম না, কিন্তু ভাগী হাইতাম । তোমরা বলিবে, ইহাতে শিক্ষার কি হইল ? আমি বলি, তুমি সবজজ বাহাদুর বা ডেপুটি মহাশয় অথবা উকীল প্রবর, তুমি দিন কত তোমার একটি ছেলেকে এইরূপ সহবন্ত করিয়া রাখা দেখি, দেখিবে, যে সৎশিক্ষা এখন তুমি অসাধ্য মনে করিতেছি, উহা সুসাধ্য হইয়া উঠিবে। একজন প্রবীণ আত্মীয় যদি একটি সুকুমারী-মতি শিশুকে নিয়ত নিজের সঙ্গে রাখেন এবং সে কি করিতেছে না করিতেছে, তৎপ্রতি অনেক সময় দৃষ্টি রাখেন, তবে সেই বালকের সাধ্য কি যে, সে সেই প্রবীণের প্রদর্শিত পন্থা হইতে অল্পমাত্র বিচলিত হইবে। তাহার উপর, যদি সেই প্রবীণের মনে কোনপ্রকার ছাচ থাকে, তবে সেই বালকের তরল মন সেই প্রবীণের ছাচে কাজে কাজেই ঢালাই হইবে। একজনকার VOR