পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমরা দেশী বস্ত্রই ব্যবহার কারিতাম। যে বৎসর পিতা সিনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষা দিয়া শাস্তিপুরে প্রথম বেড়াইতে যান, সেই বৎসর শান্তিপুর হইতে তিন লক্ষ টাকার থান রপ্তানি হইয়াছিল। এখন পালা উল্টাইয়া গিয়াছে। তাঁতিতে থান বুনিতে ভুলিয়াছে, দেশ হিতৈষীীতার দোহাই দিয়া এখন ছেলে-পিলেকে দেশী কাপড় ব্যবহার করাইতে হয় । আমাদের এরূপ বিচিত্র শিক্ষা হয় নাই । পিতাকে প্রাণের সহিত ভালবাসিতীম ; পিতাহি পরািমং তপঃ-এ সকল জানিতাম না । শাস্ত্র জানিলে, তবে পিতৃভক্তি হয়-এ বিড়ম্বনাতেও কখন পড়ি নাই। পিতা-সরল, সংযমী, সদালাপী, মিতাচারী ছিলেন, আমি বালক হইলেও তঁহারই মত স্বভাব পাইয়াছিলাম । পূর্বেই বলিয়াছি, এই সময়ে পিতৃ জীবনের প্রধান লক্ষ্য ছিল আমার সৎশিক্ষা । তাহার গুরুতর রাজকার্য্য তিনি নিকৃষ্ট বলিয়া মনে করিতেন । সুতরাং তঁাহার জীবনের এই ভাগের বর্ণনায় আমার শিক্ষার কথায় বেশী বলিতে হইল । তাহাতে বাঙ্গালা সাহিত্য-সেবায় তাহার অনুরাগও বুঝিতে পারা গেল। : এহ স্থলে আর একটি কথা বলা বিশেষ আবশ্যক। পঞ্চাশ ষাট বৎসর পূর্বে, আদালতে বাঙ্গালা, এক বিকুৎসিত ব্যাপার ছিল। এক পৃষ্ঠা দরখাস্তে একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকিত । “এতাবতা” “বিধায়” ইত্যাদি শব্দ দিয়া প্যাচের উপর প্যাচ লগাইয়া বাঙ্গলা ভাষার এবারাৎ বা ষ্টাইল একটি বিষম গোলকধাঁধা করিয়া তোলা হইত। বাঙ্গালা লেখার জন্য যত্ব ণত্ব জ্ঞান থাকা আবশ্যক ছিল না । এষ্ণয় আকার ( ) দিয়া হািঞ () হইয়া ) ওয়ে আকার দিয়া হওী ( হওয়া ) সর্বদাই থাকিত । লেখকের কেহ বিশুদ্ধ বানানের ধার ধারিত না । ব্যাকরণ কাহাকে বলে জানিত না ! গেরির উপর গের দিয়া, প্যাচের উপর প্যাচ দিয়া, জটিল-কুটিল দুৰ্বোধি একটা কারখানা করিতে পারিলেই, লেখক বড় মুন্সি হইতেন। লেখকদিগের বুদ্ধি ছিল না। এমন নহে ; কিন্তু ঘোর-ফের করিয়া যে যত ভাষা অস্পষ্ট করিতে পারিত, তাহার মুন্সিয়ান বুদ্ধির ততই প্রশংসা হইত। তাহার পর নির্ব্ববুদ্ধিতাও যথেষ্ট ছিল । একজন উচ্চ কর্ম্মচারী তাহার উপরিস্থ আর একজন উচ্চতর কর্ম্মচারীকে লিখিলেন-“পুলিশ সাহেবের আশায় দস্যরা পলায়ন করিল ! বড় সাহেব বাহাদুর অভিধান দেখিয়া জানিলেন যে ‘আশা’ অর্থে ইচ্ছা ; অতএব বুঝিলেন, পুলিশ সাহেবের ইচ্ছাক্রমে ডাকাতরা পলাইয়াছে। সুতরাং পুলিশ সাহেব সাসপেণ্ড হইলেন, মহাতুমুল হইয়া উঠিল। লেখা উচিত ছিল, “পুলিশ সাহেব আসাতে, তাহা না লিখিয়া “পুলিশ সাহেবের আশায়া” লেখাতেই এত গণ্ডগোল হইল । এরূপ সর্ব্বদাই হইত। এই সকল বিড়ম্বন দূরীকরণার্থ পিতা দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ