পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথা নানারূপ জল্পনা হইত। আমি কিন্তু তৎকালে বা তাহার বহুপীয় পর্য্যন্ত ভাল করিয়া কিছুই বুঝি নাই। এখনও যে বেশ করিয়া বুঝিয়াছি, সে স্পর্যা করিতেছি না । আমার শিক্ষার কথা বলিতে হইলে, সেই সময়ের সমাজের কথা বলা একান্ত আবশ্যক । যখন যাহার কাছে, যেটুকু শিখিয়া থাকি, পিতা যেরূপেই আমার চরিত্র গঠন করিয়া থাকুন, সে সময়ের সমাজের কথা না জানিলে, না বুঝিলে সেই সময়ের কাহারও শিক্ষার ভিত্তি বুঝা যায় না। মনুষ্য অদৃষ্ট হইতে কি পায়, না পায়, ঠিক বলিতে পারা যায় না। আভিজাত হইতে কতকগুলি জিনিস পায় ; নিকটস্থ আত্মীয় পিতা মাতা ভাই ভগিনী হইতে লালন-পালনে কতকগুলি সঞ্চয় করে । গুরু মহাশয় প্রভৃতির তাড়নায় অনেকে শিক্ষা করে। দীক্ষা গুরুর রূপায়, কেহ কিছু পায়, কেহ পায় না । এ সকল বিশেষ প্রাপ্তির কথা-কিন্তু সমাজ হইতেই সাধারণত সকলেই ? শিক্ষা করে। সমাজ-মনুম্ভের উপর নিঃশব্দে, বিনা আড়ম্বরে, গুরুগিরি করিয়া थg । সেইজন্য বলিতেছিলাম, আমার কি কাহারও শিক্ষার কথা বুঝিতে হইলে, আমাদের বাল্যকালে, এই বঙ্গসমাজের কিরূপ অবস্থা ছিল, তাহা বুঝা একান্ত 町柯塑<山 আবশ্যক বটে, কিন্তু বুঝা বড় কঠিন। এখন মনে হয় যে, সমাজের মূলভিত্তি বুঝি বদলাইয়া গিয়াছে। ত্রিশ চল্লিশ বৎসরে জাপানের বাহু পরিবর্তনে জগৎ যেরূপ চমৎকৃত হইয়াছে, আমাদের বঙ্গসমাজের আভ্যন্তরিক পরিবার্ত্তন লক্ষ্য করিতে পারিলে, সেইরূপই বিস্ময় বোধ হইবে । কিন্তু আভ্যন্তরিক পরিবর্তন লক্ষা করা বড় কঠিন ; সেইজন্য কাহারও বড় বিস্ময় হয় নাই । আমাদিগকে নাকি, সেই সমাজে শিক্ষা পাইয়া, এই সমাজে পরীক্ষা দিতে হইতেছে, এ কাজেই এই আভ্যন্তরিক পরিবর্তন, আমাদিগের, বিশেষ আমার, বিলক্ষণ লক্ষ্য হইয়াছে। তখন বঙ্গসমাজের মূলে ছিল—সন্তোষ ; এখন এই সমাজের মূলে দাড়াইয়াছে -অসন্তোষ, একেবারে চিতেন মোহাড়া উল্টাইয়া গিয়াছে । আমাদের শাস্ত্রে আছে —সমাজও বুঝিয়াছিল, সন্তোষ সকল সুখের মূল। অর্থাৎ সুখ হয় সন্তোষ হইতে। যুরোপ বলে, কাজেই অনেকে তাহা কার্য্যে মানিয়া লইয়াছে।--সন্তোষ হইতে আলস্য হয়, আলস্য সকল দুঃখের মূল। ইহার ফলে এই হইয়াছে, তথাকথিত শিক্ষিত সম্প্রদায় শুধু গড়ে ঢেকীতে পাদ দিবেন, তবু চাবে মন দিবেন না। পণ্ডিত, অপণ্ডিত, জ্ঞানী, মুর্থ ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, কামার, কুমার, চাষা-ভুৱা সকল শ্রেণীর পনের আনা লোক থাকিত-আপিন অবস্থায় সন্তুষ্ট ; অবস্থার উন্নতির চেষ্টা পিতা-পুত্র-৪