পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুখে । কাজেই বোধ হয়, এইরূপ ভাৰও সকলেরই মনে । কর্ম্মে জিদ না থাকায়, তেজ করিয়া কর্ম্ম না করায়, না কর্ম্মীর স্মৃত্তি থাকে, না কর্ম্মে শ্রীবৃদ্ধি হয়। আমি ভাল কর্ম্ম বা মন্দ কর্ম্মের কথা বলিতেছি না । ভাল মন্দ দুইরূপ কর্ম্মেই আমাদিগের মধ্যে এখন প্রবৃত্তির তেজ না থাকারই কথা বলিতেছি। তাহার পর অ্যাপ্তবাকো আস্থা । তখনও লোক করিত, এখনও লোকে করে । তবে তখন হইতে এখনকার প্রভেদ এই যে, • খন লোক আপ্তবাকাকে আপ্তবাক্য বলিয়া বিশ্বাস করিতে কুষ্ঠিত হইত না । এখন আমার মতের সহিত কোন এক বাক্যের মিল আছে, সেই জন্য, সেই বাক্যটিকে আমার মতের সমর্থনাথ প্রয়োগ করা হয়। একটা স্কুল উদাহরণ দিতেছি। ধরুন যেন, ঋষিবাক্য আছে যে, একাদশীতে অন্নাহার নিষেধ ; সোজাসুজি সেটি আপ্তবাক্য মনে করিয়া নিষেধ মানিলেই চলে। তাহা না করিয়া, অনেকে বলেন যে, একাদশীর সময় হইতেই রসের সঞ্চার হয়, সেই জন্য একাদশীতে লঘু আহার করা, বা উপবাস দেওয়া ভাল। অর্থাৎ এই মত যেন বিজ্ঞানবলে স্থির করিয়াছি, ঋষিবাক্যে সমর্থন পাইয়াছি মাত্র। যদি জিজ্ঞাসা করা যায় যে, একাদশীতে লঘু আহার, আর ত্রয়োদশী চতুর্দশীতেই বা নয় কেন ? তাহা হইলে আমাদের বৈজ্ঞানিকেরা কোন হেতুবাদ দিতে পারেন না , বাস্তবিক একাদশীতে লঙ্ঘন প্রভৃতি বাক্যে শাস্ত্রের শাসন বা শব্দ প্রমাণ বাতীত অন্য হেতু কিছু নাই। শব্দ প্রমাণে বা আপ্তবাকো আস্থা না থাকায়, আমরা অনর্থক বৈজ্ঞানিক হেতুবাদের অনুসন্ধান করি। মাত্র । আপ্তবাক্যে অস্থা না থাকিলে কি সংসারের, কি ধর্ম্মের কোন কার্য্য হয় না । তবে সংস্ক না করিয়া একটা শ্লোক বলিলেই তাহা ঋষিবাক্য বলিয়া তাহাতে আস্থা করিতে হইবে, এমন কোন কথা নাই। এক বেদ ভিন্ন, সব্বত্রই বিচার চলে। বেদ অপ্রচলিত পদার্থ। মাক্ষামূলার বা রমেশ দত্ত ছাপিলে বেদ হয় না। পরম্পরা মন্ত্র শুদ্ধি থাকিলে বেদ বলিয়া একরূপ উজ্জল জ্ঞান থাকিত। সেই জ্ঞান থাকিলে, বুদ্ধি বৃত্তি স্বতঃ বিকাশিত হইত। এ সব কথা এখন পুরাণ কাহিনী হইয়াছে। এ সকল কথায় আস্থা করি, বা না করি, তাহাতে ক্ষতি নাই ! বেন্দই অপ্রচলিত, তা বেদনির্ম্মক শব্দের অর্থ কি হইবে ? কিন্তু তা’ বলিয়া অ্যাপ্তবাক্য নাই, এমন কথা বলা যায় না। বেদের পরেই মনুর প্রমাণ । সেই মনুর কতকগুলি কথা, আমরা ভৃগুসংহিতায় ও নারদসংহিতায় দেখিতে পাই। কোনটি আপ্ত, কোনটি আপ্ত নহে, ইহার বিচার হউক । কিন্তু আগু বলিয়া স্থির হইলে, তাহাতে আস্থা না করিয়া কিরূপে থাকা যায় ; মনের অবস্থা অনুসারে আস্থার হ্রাসবৃদ্ধি হয় । চিত্ত পরিষ্কার থাকিলে, তাহাতে যেন একরূপ আঠার মত পদার্থ থাকে, যাহাতে লাগাও, তাহতেই লাগিয়া যায়। yang