পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাক্স, পকেট বই-এই সকল সামগ্রী আগে থাকতে সংগ্রহ করতে হয়- তাই লেখাপড়ায় দিনকতক ক্ষান্ত দিয়ে বড়দাদা লেখবার জিনিস তয়েরির কাজে মন দিলেন। একদিকে যেমন কাগজের কারুকার্য্য, অন্যদিকে লিখনপ্রণালী সংস্কারের প্রতি মনোনিবেশ করে রেখাক্ষর বর্ণমালার সৃষ্টি করলেন । সাহিত্য ব্যবসায়ীর যাতে সময় সংক্ষেপ হয় তাই উদ্দেশ্য। এই দুই সখের বিদ্যায় তার বিস্তর সময় ও পরিশ্রম ব্যয় হ’ল। এই দুই বিদ্যা যদিও সামান্য তবু বড়দাদা অসামান্য ধৈর্য্য ও অধ্যবসায়সহকারে তাদের আয়ত্ত করতে নিযুক্ত রইলেন। তার জন্যে চিন্তা শিক্ষা ও সাধনা যা কিছু প্রয়োজন কিছুই বাকী রাখেন নাই । বাক্সতত্ত্বের জন্য সমুদায় গণিতশাস্ত্র মন্থন করে তঁর কাজের উপযোগী বিষয় সকল সংগ্রহ করতে হয়েছে, সেই সংক্রান্ত নূতন নিয়মাবলী প্রস্তুত করতে হয়েছে। সেই নব গণিতশাস্ত্র বারংবার সংস্কারের পর এইক্ষণে কোন এক আমেরিকান পণ্ডিতের হস্তে সমাপিত হয়েছে, পরীক্ষার ফল কি হয় দেখবার জন্য বড়দাদা পথ চেয়ে আছেন । এই ত গেল বাক্স প্রকরণ । বেখাক্ষর, সে ও এক অপূর্ব বস্তু, তাতে কত কবিত্বরস, কতরকম রেখাপাতের কৌশল ছড়াছড়ি, না দেখলে তার মর্য্যাদা বোঝা যায় না। সম্প্রতি এই রেখাক্ষর পদ্ধতি পুস্তকাকারে মুদ্রিত হয়েছে-এ বিষয় কেহ জানতে ইচ্ছা! করলে অনায়াসে কৌতুহল চারিতার্থ করতে পারবেন। দুঃখের বিষয় এই যে র্তার কোন ছাত্র রেখাক্ষর লেখায় এ পর্য্যন্ত কৃতিত্ব দেখাতে পারলে না । এখনকার সময়ে কোন সুনিপুণ রেখাক্ষর-লেখক পেলে আমরা অনেকে ভাগ্য মনে করি। আমি বাল্যকালে রেখাক্ষর লিখনপদ্ধতি অভ্যাস করি নাই , কেবল নিজের সঙ্কেত লিপিতে টুকে নিয়ে অনেকানেক বক্তৃতা লিপিবদ্ধ করেছি। আদি ব্রাহ্মসমাজের বেদী হ’তে পিতৃদেব যে সকল উপদেশ দিতেন সেগুলি বলবার সময় আমি আমনি নোট করে নিতুম, পরে অবসর মতে বিস্তার পূর্বক লিখে দিলে তিনি সংশোধন করে ছাপাতে দিতেন, পর সপ্তাহে সেই ছাপা কাগজগুলি উপাসকমণ্ডলীর মধ্যে বিতরণ করা হ’ত-সেইগুলি ‘ব্রাহ্মধর্ম্মের ব্যাখ্যান’ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। সে সময়ে কেশবচন্দ্র ব্রহ্মানন্দ ব্রহ্মসমাজে যোগ দিয়েছেন ; নূতন নূতন বক্তৃতা, নূতন ব্রাহ্মসঙ্গীত-ব্রাহ্মসমাজে যেন নবজীবন সঞ্চার করেছে। ধর্ম্মশিক্ষার জন্য ব্রহ্মবিদ্যালয় নামক একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, তাতে কেশবচন্দ্র সেন ইংরাজীতে ও আমার পিতা বাঙ্গলায় উপদেশ দিতেন । পিতৃদেবের প্রদত্ত উপদেশগুলি পূৰ্বোক্ত প্রণালীতেই লিপিবদ্ধ ও পরে "ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস” নামক গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। আমি ইংলণ্ড যাবার পর পিতৃদেবের বক্তৃতা তুলে নেবার কাজে হেমেন্দ্রনাঞ্চ আমার স্থান অধিকার করেন । RVD