পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গন্তব্য পথ দেখাইয়া দিয়া গিয়াছিলেন, মাতা চিরদিন সেই পথে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন । আমার শৈশবে আমার মাতৃদেবীর ও আমার প্রপিতামহের যে ধর্মভাব দেখিয়াছি, তাহা ভুলিবার নহে। আমাকে রোগমুক্ত করিবার জন্য মা'র ইষ্টদেবতার নিকট মানতের কথা পূর্বেই বলিয়াছি। তাঁহাই কেবল নহে, ধর্ম সাধন তাহার প্রতিদিনের প্রধান কার্য ছিল। মাটি দিয়া শিব গড়িয়া নিত্য পূজা করিতেন। সে পূজাতে অনেকক্ষণ থাকিতেন। খাবার অন্ন ঠাকুর দিগকে নিবেদন না করিয়া কাহাকেও খাইতে দিতেন না। বিশেষ বিশেষ দিনে ব্রত নিয়ম উপবাসাদি চলিত, প্রতিদিন পূজার ফুল অনিয়া আমার মাথায় দিতেন এবং নিজের পদধূলি দিয়া আশীৰ্বাদ করিতেন। সাধু পুরুষ প্রপিতামহ। প্রপিতামহদেবের ধর্মভাবও চিরস্মরণীয় হইয়া বুহিয়াছে। তিনি বিশ্বাসী ভক্ত শাক্ত সাধক ছিলেন। তঁহার ইষ্টদেবতাকে সর্বদা "দয়াময়ী মা’ বলিয়া ডাকিতেন। যৌবনে নিজের দুই কন্যা সন্তান জন্মিলে তঁহাদের নাম দয়াময়ী’ ও ‘করুণাময়ী’, রাখিয়াছিলেন । তাহারা বাল্যকালেই গাত হন। দয়াময়ী করুণাময়ীর চিন্তা তাহার মনে কিরূপ লাগিয়া ছিল, তাহার প্রমাণ এই যে, তাহদের মৃত্যুর প্রায় ষাট বৎসর পরে যখন আমার প্রথমা ভগিনী উন্মাদিনী জন্মিল, তখন "ণ্ঠাহার্ব্ব মনে হইল দয়াময়ী আবার আসিয়াছে । প্রপিতামহদেব জপতপ পূজাদিতে প্রতিদিন প্রাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় যাপন করিতেন। প্রথমত প্রায় একঘণ্টা কাল দেপ দেবীর পূজন ও জাপ প্রভৃতিতে যাইত, তৎপরে প্রায় আধা ঘণ্টা কাল পিতৃপুরুষের তর্পণে অতিবাহিত হইত। তৎপরে প্রায় আধা ঘণ্টা কাল মাটিতে মাথা ঠুকিয়া ইষ্টদেবতার চরণে প্রণাম ও প্রার্থনা হইত। এই প্রণাম করিয়া করিয়া তাহার কপালের উপরে একটা অবেক্স মতো মাংসের গুলি জমিয়াছিল। মাথা ঠুকিয়া যখন প্রার্থনা করিতেন, তখন আমার মা কোনো কোনো দিন কান পাতিয়া শুনিতেন। একদিন মা শুনিলেন যে, তিনি মুখে মুখে বাংলা ভাষাতে র্তাহার ইষ্টদেবতার চরণে আমার বিদেশবাসী পিতার জন্য প্রার্থনা করিতেছেন। বলিতেছেন, “মা দয়াময়ি । সে বিদেশে পড়ে আছে, তাকে রক্ষা করে । সে কাহারও বারণ শোনে না, তাকে সুমতি দেও,” ইত্যাদি। সৰ্বশেষে উঠিয়া দাড়াইয়া করতালি দিয়া নাচিতেন । নাচিবার সময় আমার ডাক হইতে, “বাবা ? আমি তখন দিগম্বরমূর্তি বালক, মা আমাকে খেলার ভিতর হইতে ধরিয়া আনিতেন এবং প্রপিতামহের হাতে হাত দিয়া নাচিতে বলিতেন। আমনি দুইজনে হাতে হাত ধরিয়া নৃত্য আরম্ভ হইত। তিনি তিনশত পয়ষট্রিদিন নাচিবার সময় একই গান করিতেন, তোহার দুই পংক্তি মাত্র আমার মনে আছে \©ዓ