পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অবশেষে সেই সঙ্কল্প যখন বাবার গোচর করা হইল, তখন আগ্নেয়গিরির অমৃত্যুদগমনের ন্যায় তাহার ক্রোধাগ্নি জলিয়া উঠিল। তিনি কুপিত হইয়া আমাকে প্রহার করিয়া ঠাকুরঘরের দিকে লইয়া যাইবার জন্য লাঠি হন্তে ধাবিত হইয়া ‘আসিলেন। আমি ধীর ভাবে বলিলাম, “কোন বৃথা আমাকে প্রহাৱ করিবেন ? আমি অকাতরে আপনার প্রহার সহ্য করিব। আমার দেহ হইতে এক-একখানা হাড় খুলিয়া লাইলেও আর আমাকে ওখানে লাইতে পরিবেন না।” এই কথা শুনিয়া ও আমার দৃঢ়তা দেখিয়া তিনি হঠাৎ দাড়াইয়া গেলেন, এবং প্রায় অর্ধঘণ্টা কাল কুপিত ফণীর ন্যায় ফুলিতে লাগিলেন। অবশেষে আমাকে পূজার কাজ হইতে নিস্কৃতি দিয়া নিজে পূজা করিতে বসিলেন । সেইদিন হইতে আমার মূতি পূজা রহিত হইল। আমি সত্যস্বরূপের উপাসক হইলাম। কিন্তু আমাদের পারিবারিক আন্দোলন গ্রামবাসী আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল। আমাকে সকলেই নির্যাতন করিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইলেন। তৎপরে বাবা আমাকে গ্রামস্থ ব্রাহ্মদিগের সহিত মিশিতে নিষেধ করিতে লাগিলেন । আমি ‘অন্য সময়ে মিশিতাম না, কিন্তু যেদিন তাহারা সকলে উপাসনা করিবেন বলিয়া সংবাদ দিতেন, সেদিন বাবা গাত্রোখান করিবার পূর্বেই গিয়া উপাসনাতে যোগ দিতাম, আসিয়া তিরস্কার ও গঞ্জনা সহ কিরিতাম । তখন কেহ ব্রহ্মোপাসনা করিবে: শুনিলে চারি পাচ মাইল হাটিয়া গিয়া যোগ দেওয়া আমার পক্ষে কিছুই কষ্টকর ছিল না । অথচ এই সময়ে গ্রামের কতিপয় ব্রাহ্ম, ভবানীপুরের দুই-চারিজন ব্রাহ্ম ও বিজয় অঘোর ভিন্ন আর কোনো ব্রহ্মের সহিত আমার আত্মীয়তা ছিল না । কাহারও সঙ্গে মিশিতাম না, লিজাতে কাহারও সহিত আলাপ করিতে চাহিতাম না । শাঁখারীটোলার জগৎবাবু। ১৮৬৭ সালের শেষ ভাগে অ্যামি ভবানীপুরের চৌধুৰী মহাশয়দিগের বাট হইতে ঐ স্থানে একটি ভদ্রপরিবারের অনুরোধে তঁহাদের সহিত কলিকাতা শাঁখারীটোলাতে এক বাড়িতে আসিয়া বাস করিতে লাগিলাম । তাহার ইতিবৃত্ত এই। জগচ্চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নামে একটি ভদ্রলোক ভবানীপুরে বাস কৱিতেন । মহিম নামে তাহার একটি ছেলে সংস্কৃত কলেজে পড়িত ও আমাদের সঙ্গে এক গাড়িতে কলেজে যাইত । সেই সুত্রে জগৎবাবুৱ সহিত আমার পরিচয় হয়। জগৎবাবুর সাধুতা সদাশয়তা সৌজন্য দেখিয় তাহার প্রতি আমার ভক্তি শ্রদ্ধা জন্মে, আমার প্রতিও তঁহার পুত্রবৎ মেহ জন্মে। তিনি আমাকে তঁহার বাড়িতে লইয়া গিয়া তাহার গৃহিণীর সহিত আলাপ পরিচয় করাইয়া দেন । ዓb”