পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্র্যাকটিকাল রিলিজানেই আমি সর্বাপেক্ষা অধিক হারিয়া গিয়াছি। আমার আকাজক্ষা চিরদিন আধ্যাত্মিক উন্নতির দিকে রহিয়াছে, কিন্তু প্রবৃত্তি সকলকে সকল সময়ে সে আকাজক্ষার বশীভূত করিতে পারি নাই। নিজের নানা প্রকার দুর্বলতার সাহিত মহা সংগ্রামে বাস করিতে হইয়াছে । যাহা হউক, এই কয়েক বৎসরের মধ্যে আমি অনেক জীবনচরিত পড়িয়া ফেলি। স্মরণ আছে যে, প্রতিদিন বৈকালে কলেজ হইতে আসিয়া বীটনস বাইওগ্রাফিকাল ডিকশনারি’ হইতে বড় বড লোকের জীবনচরিত পড়িতাম । মানুষ সংগ্রাম করিয়া প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে দাড়াইয়া নিজের জীবনের মহত্ব সাধন করিয়াছে, ইহা দেখিলে আমার আনন্দ হয়, ভাবিতে সুখ হয় , আমি তোহার মধ্যে মানব জীবনের দায়িত্ব ও ঈশ্বরের কৃপার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন পাই । জীবনচরিত ভিন্ন আরও কয়েকখানি গ্রন্থে এই উপকার পাইয়াছিলাম। থিওডোর পার্কারের গ্রন্থাবলীর উল্লেখ আগেই করিয়াছি। নিউম্যানের ‘সোল-ও বোধ হয় এই সময় পড়িয়া থাকিব। তৎপরে আমাদের এল. এ. কোর্সে আর্থার হেল্পস-এর “এসেজ রিটন ইন দি ইণ্টারভালস অভ বিজনেস’ ছিল । তাহা দ্বারা এত উপকৃত হইয়াছিলাম যে, সেই সূত্রে হেল্পস-এর 'ফ্রেণ্ডস ইন কাউন্সিল” আনিয়া পড়ি । আমি মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিতেছি, আমার ধৰ্মজীবনের সেই প্রথমোদ্যমে আমি উভয় গ্রন্থ হইতে বিশেষ সাহােমা পাই । তৎপরে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৌখিক ও লিখিত উপদেশ, তাহাতে আমাকে কি শক্তি কি সাহায্য দিত, তাহা বলিতে পারি না । এক-একদিন তঁহার উপদেশ শুনিয়া দশবারোদিন সেই নেশাতে থাকিতাম। সংক্ষেপে বলিতে গেলে, ঐ সময় আমার জ্ঞানের বুভুক্ষা অতিশয় প্রবল ছিল। যখনই কোনো ভালো গ্রন্থ হাতে পাইতাম, অমনি ক্ষুধার্ত ব্যাস্ত্র যেমন আমিষ খণ্ডের উপরে পড়ে, সেই ভাবে তাহার উপরে পড়িতাম । সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের গঠন কার্যে যে কয়েক বৎসর ব্যাপৃত ছিলাম, সে কয়েক বৎসর কার্যের ভিড়ে পড়িয়া আমার এই বুভূক্ষাকে সম্পূর্ণ চরিতার্থ করিতে পারিতাম না। আবার এতদিনের পরে সেই বুভূক্ষা প্রাণে জাগিয়া উঠিতেছে। কিন্তু হায়! আর সে শক্তি নাই। এখন মনে হয়, আবার যদি যৌবনের শক্তি পাই ও মনের মতো লাইব্রেরি পাই, একবার প্রাণ ভরিয়া পড়ি । মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের আদি ব্রাহ্মসমাজ । আমার ব্রাহ্মধর্ম ও ব্রাহ্মসমাজের প্রতি আকর্ষণ ১৮৬৫ সাল হইতে জন্মিলেও আমি এতদিন পর্যন্ত লজ্জাবশত কিরূপে ব্রাহ্মসমাজ হইতে দূরে দূরে থাকি,তাম, তাহা অগ্রেই বলিয়াছি। যত দূর মনে হয়, ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত কেশবচন্দ্রের উন্নতিশীল দল অপেক্ষা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আদি সমাজের দিকেই আমার অধিক আকর্ষণ ছিল। আমার যত দূর স্মরণ হয়, আমার জাতি দাদা S as