পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেই ভাৱ পরিত্যাগ করিয়াছেন, এখন আমাকে গ্রহণ করিতে হইবে। পাকড়াশী মহাশয়ের প্রতি আমার প্রগাঢ় শ্রদ্ধা ছিল। আমি তাহার উপদেশে বিশেষ উপকৃত হইয়াছি। অ এর বাস্তবিক ব্রাহ্ম আচার্যদিগের মধ্যে চিন্তাশীলতা মৌলিকতা ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টি বিষয়ে এরূপ অল্প লোক দেখিয়াছি। তঁহার পরিত্যক্ত বেদী আমি গ্রহণ করিব, ইহা ভাবিয়া সঙ্গুচি ত হইলাম। কিন্তু তঁহাদের হাত এড়াইতে পারিলাম না । শেষে, এক শুক্রবারে গিয়া উপাসনা করিতে স্বীকৃত হইলাম। এবারে ও উপদেশ লিখিয়া লইয়া গিয়েছিলাম। এই একবার উপদেশ দিয়া আমার বিপদ দশ গুণ বাড়িয়া গেল। তেঁাহারা আমাকে নাছোড়বান্দা হইয়া ধরিলেন । কাজেই আচার্যের ভার আমাকে গ্রহণ করিতে হইল। এই ভার আমার প্রভূত অধ্যাত্মিক উন্নতির ও আচার্যের কার্য শিক্ষার উপায়স্বৰূপ হইল। আমি কযেক বৎসবে এই কাজ করিয়াছিলাম। যেখানেই থাকি, শুক্রবার সন্ধ্যার সময় সিন্দুরিয়াপটীতে আসিয়া উপস্থিত হইতাম । fক বলিব, সে বিষয় সপ্তাহ ক’লে ভাবিতম। উপাসক-মণ্ডলীর অভাব নিজ চিত্তে ধারণা করিবার চেষ্টা করি তাম, প্রতেকের সুখে সুখী, দুঃখে দুঃখী হইবার চেষ্টা কারিতাম। সংক্ষেপে বলিতে গেলে, আচার্যের দায়িত্ব অনেকটা অনুভব করিতাম । এই দায়িত্বজ্ঞ নই। আমাকে ফুটাইয়াছে । ক্রমে সেই ক্ষুদ্র উপাসক-মণ্ডলীর সকলের সঙ্গে ভালোবাসা জন্মিয় গেল । সেই সম্বন্ধ বহু কাল কুঁহিয়াছে । গোপালচন্দ্র মল্লিক, নেপালচন্দ্র মল্লিক, সিন্দুরিয়াপটী পরিবারের দুই ভাই যতদিন জীবিত ছিলেন, আমাকে বিধিমতে নানা বিষয়ে সাহায্য করিয়াছেন । শেষে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ স্থাপিত হুহলে গোপালচন্দ্র মল্পিক আমাদেৱ সঙ্গে-সঙ্গে ইহাতে প্রবেশ করেন ও ব্রাহ্মমতে বিবাহ করিয়া স্বীয় পিতা কর্তৃক পরিত্যক্ত হন। তাহার পিতা স্বৰ্গীয় মণিলাল মল্লিক অ্যাদি সমাজ ভুক্তি ব্রাহ্ম ছিলেন। তিনি ঐ পারিবারিক সমাজ স্থাপন করেন । ১৮৭১ সালের ১৪ই আষাঢ় আমার পুত্র প্রিয়ানাথের জন্ম হয় । ঢাকার অবলাবান্ধব পত্রিকা । এই সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, অবলাবান্ধব সম্পাদক ব্রাহ্মসমাজে সুপরিচিত দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের সহিত মিলন। তখন ঢাকা সমাজ-সংস্কারের প্রধান ক্ষেত্র হইয়া উঠিয়াছিল। এই সময়ে ‘মহাপাপ বাল্যবিবাহ” নামে এক পত্রিকা ঢাকা হইতে বাহির হয়, তাহাতে সেখানকার যুবক দলেয় উপরে আমাদের অতিশয় শ্রদ্ধা জন্মে। এই রঙ্গভূমিতে অবলাবান্ধব দেখা দিল । আমরা ভাবিলাম, এ কে বঙ্গদেশের এক কোণ হইতে নাৰীকুলের হিতৈৰী হইয়া দেখা দিল ? অবলাবান্ধবের সম্পাদককে তখন চিনিতাম না, কিন্তু তঁহার তাজতাজা কথা প্রাণ হইতে আসিতেছে বোধ হইত ও আমাদের বড় ভালো লাগিতা। Ο Σ. Ο