পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভবিষ্যতে অনেক কাজ দেখত। তবে ওরূপ মুর্থ পণ্ডিতের কাছে বেশী কিছু প্রত্যাশা করা অন্যায়, আমরা ঐ গুরুর কাছে লেখাপড়ায় বেশী দূৱ না এগিয়ে থাকিনিদেন গোড়া পত্তন সেই । উপনয়ন নয় বৎসর বয়সে আমার উপনয়ন হয়, ঘটনাটি বেশ মনে পড়ে। কর্ণভেদ, শিরোমুণ্ডন এগুলি যদিও ভাল লাগেনি। কিন্তু নাপিতের উপর বিদ্রোহাচরণ করেছিলুম। বলে মনে হয় না। হবিন্যান্ন ভোজনে বেশ তৃপ্তি লাভ করতুম, ভালই হোক মন্দই হোক রোজাকার ডালভাতের চেয়ে রুচিকর। ভিক্ষার বুলি কঁদে করে ‘ভিবতি ভিক্ষাং দেহি’ বলে উপবীতধারী ব্রহ্মচারী সাজা, তিন দিন ঘৱে বন্ধ হয়ে থাকাপাছে শূদ্রের মুখ দেখে ব্রাহ্মণত্ব নষ্ট হয়, এই চিরন্তন হিন্দুপ্রথা অনুসারে আমার পইতা হ'ল। কারাবাস হ’তে মুক্তির পর ন্যাড়া মাথায় বাড়ীময় ঘুরে বেড়ানো আর সকলের কাছ থেকে ব্রহ্মচারী বলে অভিবাদন পাওয়া-মনে মনে কত গর্ব্ব হচ্ছে-যেন আমি কি একটা ধনুখর হয়েছি, অথচ ব্রহ্মচর্য্য কাকে বলে মানবক সে বিষয়ে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। ব্রহ্মচর্য্যের ব্যাখ্যা করে আমাদের পুরুতষ্ঠাকুর কোন উপদেশ দেন নাই। কেহ আমাদের বলে নাই, “আচার্য্যাধীনো বেদমন্ধী স্ব’- আচার্য্যাধীন হইয়া বেদাধ্যয়ন কর,-অথবা ‘‘অধীহি, ভোঃ সাবিত্রীং মে’-আমার নিকট গায়িত্রী শিক্ষা কর । ‘মা দিবা স্বাক্ষসীঃ”-দিবানিদ্রা যেয়ে না বলে আমাদের কেহ সাবধান করে দেয়নি, আর আমরা ও আরামের জিনিসটা অনেকদিন পর্য্যম্ভ আঁকড়ে ধরেছিলুম। তিন দিন ঘরে বন্ধ থাকা যে দ্বাদশ বৎসর গুরুকুলে বেদাধ্যয়ন করা-তা আমরা বুঝি নাই। ব্রাহ্মণ শূদ্রের মধ্যে যে জাতিগত পার্থক্য ( বৈদিককালে যেমন আর্য্য। আর দস্থ্যর মধ্যে )। সেই ভেদবুদ্ধি ফুটিয়া তোলা যদি ঐ নিয়মের উদ্দেশ্য হয়, সেটা সিদ্ধ হয়েছিল বলতে হবে । কতকগুলি সন্ধ্যার মন্ত্র আবৃত্তি করতে শিখেছিলুম তার মানে না বুঝে —এখন দেখছি যে শব্দগুলি আওড়াতুম তার অর্থ- বারিবীন্দনা। ও শল্প আপো ধন্বন্যা: শমনঃ সন্তু কুপ্যাঃ শল্পঃ সমুদ্রিয়া,-কুয়ার জল আমাদের মঙ্গল করুক, সমুদ্রের জল মঙ্গল করুক ইত্যাদি। কুপোদককে কথা শোনানো সহজ, সে জল পরিস্কার রাখা আমাদেরই হাতে ; কিন্তু সমুদ্র সকল সময়ে রাস মানেন না, 3S