পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবপন্ধিব-পরিবেষ্টিত সমুন্নত তরুশিখা সকল অতি মনোহর হিরন্ময় মুকুট ভূষিত করিতেছে এই আশ্চর্য্য দশন দর্শন করিয়া ইত্যাদি ।” “১৮৪৩ হইতে ১৮৫৫ সাল পর্য্যন্ত অক্ষয়বাবু সুদক্ষতাসহকারে তত্ত্ববোধিনীর সম্পাদন কার্য্যে নিযুক্ত ছিলেন, ইতিমধ্যে অর্থে পার্জনের কত উপায় তার হস্তের নিকট এসেছে, তিনি তাহার প্রতি দৃকপাতও করেন নাই। এই কার্য্যে তিনি এমনি নিমগ্ন ছিলেন যে, এক একদিন জ্ঞানালোচনাতে ও তত্ত্ববোধিনীর প্রবন্ধ লিখতে সমস্ত রাত্রি অতিবাহিত হইয়া যাইত, তিনি তাহা অনুভব ও করিতে পারিতেন না।” “অক্ষয়বাবু আমাদের ব্রাহ্মসমাজের জ্ঞানমার্গের প্রহরীরূপে দণ্ডায়মান ছিলেন। তাহারি প্রভাবে ব্রাহ্মধর্ম্ম গ্রন্থবাদ প্রভৃতি ভ্রান্ত মত হ’তে সুরক্ষিত হয়েছিল । ব্রাহ্মসমাজের ধর্ম্ম অগ্রে বেদান্তধর্ম্ম ছিল । ব্রাহ্মগণ বেদের অভ্রান্ততায় বিশ্বাস করতেন । অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয় এই উভয়ের প্রতিবাদ করিয়া বিচার উপস্থিত করেন। প্রধানতঃ তাঙ্গারি প্ররোচনাতে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর উক্ত উভয় বিষযে গভীর চিন্তা ও শাস্ত্রানুসন্ধানে প্রবৃত্ত হন। অবশেষে বহু অনুসন্ধানে ও চিন্তার পর অক্ষয়বাবুর অবলম্বিত মত যুক্তিসিদ্ধ জানিয়া বেদান্তবাদ ও বেদের অভ্রান্ততাবাদ পরিত্যাগ করিলেন ।’* বেদোপনিষদ ব্রাহ্মধর্ম্মের প্রতিষ্ঠাভূমি হয় মহাষির ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল, তঁহাকে বেদান্তধর্ম্ম ও বেদের অভ্রান্তত হইতে বিচলিত করিতে অক্ষয়বাবুকে বহুপ্রয়াস পাইতে হইয়াছিল। পিতার আত্মচরিতে এই বিষয়ে তার মনোগত ভাব ব্যক্ত হইয়াছে । তিনি বলিতেছেন- “প্রথমে বেদ ধরিলাম, সেখানে ব্রাহ্মধর্ম্মের ভিত্তি স্থাপন করতে পারিলাম না, তাহার পরে প্রামাণ্য একাদশ উপনিষদ ধরিলাম, কি দুর্ভাগ্য ! সেখানেও ভিত্তি স্থাপন করিতে পারিতেছি না। তবে এখন আমাদের কি করিতে হইবে ? আমাদের উপায় কি ? ব্রাহ্মধর্ম্মকে এখন কোথায় আশ্রয় দিব ? বেদে তাহার পত্তন ভূমি হাঁহল না-উপনিষদে ও তাহার পত্তনভূমি হইল না। কোথায় তাহার পত্তন দিব ? দেখিলাম যে আত্মপ্রত্যয়-সিদ্ধ জ্ঞানো জলিত বিশুদ্ধ হৃদয়েই তাহার পত্তন ভূমি।” * * * “উপনিষদ হইতেই প্রথমে আমার হৃদয়ে আধ্যাত্মিক ভাবের প্রতিধ্বনি পাইয়াই আমি সমগ্র বেদ এবং সমস্ত উপনিষদকে ব্রাহ্মধর্ম্মের প্রতিষ্ঠা করিতে যত্ন পাইয়াছিলাম ; কিন্তু তাহা ‘’ করিতে পারিলাম না, ইহাতেই আমার দুঃখ । কিন্তু এ দুঃখ কোন কার্য্যের নহে, যেহেতু সমস্ত খনিতে কিছু স্বর্ণ হয় না। খনির অসার প্রস্তরখণ্ড সকল চুর্ণ করিয়াই তাহা হইতে স্বর্ণ নিৰ্গত করিয়া লইতে হয়।

  • রামতনু লাহিড়ী-পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী শ্রণীত ।

wop