পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর একটা তাকিয়া লইয়া চক্ষু বুজিয়া পড়িয়া থাকিতে লাগিলাম। দুই চারিদিন এই রকম পড়িয়া থাকিতে থাকিতে দেখিলাম, মনে নানা কথা ওঠে, উঠিয়া}, আবার চলিয়া যায়, আবার ওঠে, আবার চলিয়া যায়, যেন শৃঙ্খলাহীন, বন্ধনহীন, এলোমেলো, কিন্তু বড়ই মোহকার, বড়ই আনন্দজনক । টপ টপ করিয়া আসে, ঝাপ, ঝপ করিয়া যায়, কিন্তু যাইয়াও যায় না, আর পাঁচটাকে আনিয়া দেয়। আনিয়া আমাকে জালে জড়ায়। দুই চারিদিনের মধ্যেই ইহাকে চিনিয়া ফেলিলাম-ইহাকে Reverie বলিয়া চিনিলাম। ইংরাজ চিনাইয়া না দিলে আমরা এখন আর কিছুই চিনিতে পারি না। আমাদের বেদবেদান্তগুলিও আর চিনিতে পারি না। তাই ঐ এলোমেলো ব্যাপারটাকে যখন "reverie বলিলাম, তখন মনে হইল, ওগুলাকে নিজেও চিনিয়াছি, অপরকেও চিনাইয়াছি। এখন ঐ রূপ কথা দুঃএকটি বলি :-এই রকম করিয়া চক্ষু “বুজিয়া পড়িয়া থাকিতে থাকিতে একদিন আমার বাল্যকালের কথা মনে উঠিতে লাগিল। তখন আমার বয়স ৮/১০ বৎসরের বেশী নয়। আমি তখন পাঠশালায় পড়ি, আমার স্বভাব কিছু চঞ্চল, কিন্তু আমি দুষ্ট বা দুরন্ত নই। আমার চঞ্চলত দেখিয়া আমাদের এক বয়স্ক কুটুম্ব আহলাদ করিয়া আমাকে বিচ্চ, বলিয়া ডাকেন। তাহাতে আমি ভারী খুন্সী। তখন আমার চক্ষু আর এক রকম ছিল। কিনা, বলিতে পারি না, কিন্তু একথা বলিতে কিছুমাত্র দ্বিধা হয় না যে, তখন যাহাঁই দেখিতাম,-রৌদ্র, জ্যোৎস্না, গাছপালার রঙ, মাটী, মাঠ, ঘাস-ব্যাহাই দেখিতাম, তাহাই যেন এখন হইতে ভিন্ন রকম দেখিতাম।-- বড় মধুর, বড় মিঠা, বড় বিশুদ্ধ, বড় সুগন্ধ, বড় সরল, বড় নির্দোষ, বড় পবিত্র, বড় সজীব। কিছুতেই মনে অপবিত্র বা আবিলভাব উঠাইয়া দিত না ; সকলই আমার মনে একটা কোমল, কলুষহীন আনন্দের ভাব তুলিয়া দিত। সে আনন্দের বর্ণনা হয় না, যে অনুভব করিয়াছে, সেই বুঝিতে পারে, সে কি অপূর্ব, কি অনিন্দ্য জিনিস, কত নির্ম্মল, কত শীতল, কত সাদাসিদে । সেই আনন্দে ভাসিতে ভাসিতে কতবেলা অবধি মাঠে মাঠে কত বেড়াইতাম, দূরে চাষার গান শুনিতাম, আশেপাশে গরুর হাম্বারব শুনিতাম। বুঝিয়াছি, ব্রহ্মচারীর চক্ষে না দেখিলে বাহ প্রকৃতির। সে মুক্তি দেখিতে পাওয়া যায় না। যখন প্রথম যৌবনোদগম ( puberty ) হইয়াছিল, এবং সেইজন্য মনে ভোগ স্পাহা জন্মিয়াছিল, তখন হইতে যাহাঁই দেখিয়াছি, তাহাই বাল্যকালের সেই নির্ম্মলতা, সেই অপূর্বত্ব, সেই পবিত্রতাহীন, সেই সজীবতা শূন্য দেখিয়াছি, তাহা যেন সেই বাল্যদৃষ্ট স্বৰ্গীয় জিনিস নয়, তাহা যেন একটা আবিল জগতের আবিল জিনিস। যাহা নিখৱকিচ ছিল তাহাতে যেন একটা খিৱিকিচ ঢুকিয়াছেপ আবিল পৃথিবীকে চিরকাল নির্ম্মল স্বৰ্গ রূপে অনুভব করিতে হইলে S