পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অতি তরুণ বয়সেই তিনি উপলব্ধি করিয়াছিলেন যে প্রকৃতির সহিত সত্য পরিচয় না থাকিলে জীবনে অশিক্ষার তমসা দরীভূত হয় না। তিনি বঝিয়াছিলেন আমাদের অধিকাংশ পরাভবের মরলে আছে বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও কমশক্তির অকিঞ্চিৎকরতা। তাই তিনি কেবলমাত্র সাহিত্য ও ইতিহাস সাধনায় অনরস্ত না থাকিয়া বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও কমশক্তির প্রভাবে দেশের দারিদ্র্য, অজ্ঞতা দরে করিতে এবং সমস্ত দেশব্যাপী তন্দ্রাচ্ছন্ন যবে শক্তিকে জাগ্রত করিয়া তুলিতে বন্ধপরিকর হইলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার সময় তিনি ইউরোপের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সমিতিতে প্রবন্ধ লিখিয়া পাঠাইতেন। এই সকল প্রবন্ধে আচার্যদেবের মৌলিকত্ব, অসাধারণ মননশক্তি ও মনীষার ব্যঞ্জনা থাকিত । মারকিউরিয়াস নাইট্রাইট বা পারদ, সংক্রান্ত একাদশটি মিশ্রধাতুর আবিস্কার করিয়া তিনি রাসায়নিক জগতে বিসময় উৎপাদন করিয়াছিলেন। রাসায়নিক জ্ঞানভান্ডারে তাঁহার দান বিশববিশ্রত। বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার তাঁহার তুলনাহীন সন্টি। অগণিত শিক্ষাথীকে বৈজ্ঞানিক দটিভঙ্গী দিয়া উদ্বন্ধে করিবার জন্যই এই গবেষণা-কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। বিজ্ঞানের জয়যাত্রার এই অভিযানে আচার্যদেব ছিলেন সবাধিনায়ক। কিন্তু তিনি প্রায়ই বলিতেন “সবত্র জয় অনুসন্ধান করিবে কিন্তু পত্র এবং শিষ্যের নিকট পরাজয় স্বীকার করিয়া সুখী হইবে।” এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের কথা। তিনি বলিয়াছিলেন, “আমি প্রফুল্লচন্দ্রকে সেই আসনে অভিনন্দন জানাই যে আসনে প্রতিষ্ঠিত থেকে তিনি তাঁর ছাত্রের চিত্তকে উদ্বোধিত করেছেন—কেবলমাত্র তাকে জ্ঞান দেননি নিজেকে দিয়েছেন—যে দানের প্রভাবে সে নিজেকেই পেয়েছে। বস্তুজগতে প্রচ্ছন্ন শক্তিকে উদঘাটিত করে বৈজ্ঞানিক আচাষ* প্রফুল্লচন্দ্র তার চেয়ে গভীরে প্রবেশ করেছেন। কত ষবেকের মনোলোকে ব্যক্ত করেছেন তার গহাসিথত অনভিব্যক্ত দস্টিশক্তি, বিচারশক্তি, বোধশক্তি।” আচাষ'দেব আধুনিক ভারতীয় রসায়নাগারের স্রস্টা । প্রেসিডেন্সি কলেজ ও সায়েন্স কলেজ রসায়নাগারে তিনি মৌনব্রতাবলম্বী, অধ্যবসায়শীল সুদক্ষ বৈজ্ঞানিক। প্রোফেসার মিলভ্যান লেভীর মনে এই রসায়নাগার এই লীলাময় শিক্ষাঘর যেখান হইতে নবভারতের তরণে রাসায়নিকেরা রপে লইয়া বাহির হইয়া আসিতেছে। আচাষ দেবের গবেষণা ভারতকে বিশেবর বিজ্ঞানক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা দিয়াছে । তখন দেশের দারণে দদিন। শিক্ষিত, অধশিক্ষিত বেকারে দেশ পণ্য হইয়া গিয়াছিল। আচার্যদেব দেখিতে পাইলেন বাংলার এই যবেক সম্প্রদায় অভিমানী, সংগ্রাম বিমুখ, পরিশ্রমকাতর এবং পরমুখাপেক্ষী। তাহাদের জীবনের এই অসহায় অবস্থা প্রেমিক প্রফুল্লচন্দ্রের চিত্তকে আন্দোলিত করিয়া তুলিল। বাঙ্গালীর প্রধান অবলম্বন চাকুরী। কিন্তু চাকুরী কোথায় ? বাঙ্গালী যবেককে চাকুরীর ভিখারী না হইয়া কমঠ ও বাবলম্বী হইবার আহবান তিনি জানাইলেন। সকল প্রকার বিলাস বজ’ন করিয়া সংযম ও অধ্যবসায়ের বলে তাহারা নব নব জ্ঞানের সম্পদ জয় করিয়া লইতে পারবে। আচার্যদেব তাঁহার বৈজ্ঞানিক দটিভঙ্গী, প্রেম এবং আত্মবিশ্বাস লইয়া সহস্র জীবনের সমস্যা সমাধানে ব্রতী হইলেন। তাঁহার চিররনে দেহ এই কাজের গতিকে ব্যাহত করিতে পারে নাই। পথে পিছাইয়া পড়িবার মত ক্লান্তি তাঁহার ছিল না।