পাতা:আত্মচরিত (সিগনেট প্রেস) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারি? আমি মাখে মাখে মেণ্টাল সায়েন্স বিষয়ে ও লজিক বিষয়ে উপদেশ দিতাম, ছাত্রীরা লিখিয়া লইতেন। সে সকল নোট এখনো আমার পরাতন ছাত্রীদের কাহারও কাহারও নিকট থাকিতে পারে। আমার প্রধান ছাত্রী ছিলেন তিনজন, রাধারাণী লাহিড়ী, সৌদামিনী খাস্তগির (যিনি পরে মিসেস বি. এল. গপত হইয়াছিলেন) ও প্রসন্নকুমার সেনের সন্ত্রী রাজলক্ষী সেন। ইহারা সকলেই তখন বয়সস্থা ও জ্ঞানানরাগিণী, ইহাদিগকে পড়াইতে আমার অতিশয় আনন্দ হইত। কেশবচন্দ্রের আদেশ ঈশবিরের আদেশ কিনা। সন্ত্রী-সবাধীনতার আন্দোলন ও সন্ত্রীশিক্ষা বিষয়ে মতভেদ ব্যতীত আমার প্রতি বিরক্তির আরও একটি কারণ ছিল। আমি কেশববাবর কোনো কোনো মত লইয়া সবােদা তক উপস্থিত করিতাম। এই তক অনেক সময়েই কেশববাবার সাক্ষাতে হইত। তন্মধ্যে আদেশের মত লইয়া বড় তাক হইত। কেশববাব তাঁহার সমন্দিয় কাব্য যেরপে ঈশবরাদেশ বলিয়া উপস্থিত করিতেন, এবং সকলকে ঈশবরাদেশ বলিয়া গ্রহণ করিতে হইবে এবং তদনরাপ আচরণ করিতে হইবে বলিয়া উপদেশ দিতেন, তাহাতে আমার মনে ভয় হইত যে, তাঁহার সঙ্গের লোকের চিন্তার সবাধীনতা নন্ট হইবে। হয় তাঁহার আদেশ ফজ করিতে হইবে, নতুবা নিজের হােত পা বধিয়া তাঁহার হাতে আপনাকে দিতে হইবে। আমি কেশব যান। আমরা আদেশ বলিয়া লইতেছি কি না, দেখিবেন না।” তিনি আমার কথার প্রতি কর্ণপাত করিতেন না। ইহা লইয়া তাঁহার সঙ্গে মাখে ও চিঠিপত্রে তকী হইত। আমি মানব চিন্তার সবাধীনতা রক্ষার জন্য ব্যগ্র হইতাম। তাঁহাকে বলিতাম, “মহাষি। দেবেন্দ্রনাথ তো তাঁহার সকল কাজ। ঈশবরাদেশ বলিয়া নিবাহ করিয়াছেন। কই, তিনি তো তাহা অপরের ঘাড়ে চাপাইবার চেন্টা করেন নাই, অন্যে সে ভাবে না। লাইলে তাঁহাদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করেন নাই ?” কেশববােব যখন আশ্রম সন্থাপন করিলেন, তখন ইহাকে ঈশবরাদিন্ট কাব্য বলিয়া সন্থাপন করিলেন। কেবল তাহা নহে, ঈশবিরের আদেশ বলিয়া গ্রহণ করিবার জন্য ব্রাহমাদিগকে আহবান করিলেন, এবং সে ভাবে যাঁহারা গ্রহণ করিলেন না, তাঁহাদের প্রতি বিরাগ প্রদর্শন করিতে লাগিলেন। কোহ-কেহ প্রথমে ইহাকে এ ভাবে গ্রহণ করিতে পারিলেন না। অধিক কি, যত দর সমরণ হয়, শ্রদ্ধাস্পদ প্রতাপচন্দ্র মজমিদার মহাশয়ও প্রথমে ইহাকে এ ভাবে গ্রহণ করিলেন না। আমরা সপরিবারে আশ্রমে গেলাম, কিন্তু তিনি ইন্ডিয়ান মিরার”-এ আবদ্ধ থাকাতে যাইতে পারিলেন না। তিনি ভয় পাইতে লাগিলেন যে, আশ্রমকে এরপে ঈশবরাদেশ’ বলিয়া ঘোষণা করিলে সমাজে বিরোধ উৎপন্ন হইবে। আমার বেশ সমরণ আছে, আমরা বেলঘরিয়া বা সাক্ষাৎ করিলে, তিনি বিদ্রুপ করিয়া বলিতেন, “কি হে, তোমাদের সবগরাজ্য কত দর এল ?” যদিও পরে তিনি আসিয়া আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়াছিলেন। কিন্তু এ কারণে তিনি সে সময়ে কিছদিনের জন্য প্রচারকগণের নিন্দা ও তিরস্কারের পাত্র হইয়াছিলেন। = নগেন্দ্রবাবর প্রতি প্রচারকগণের অপ্রীতি জন্মিবার আর এক প্রকার কারণ ছিল। নগেন্দ্রবাবর তখন এক প্রকার শিরঃপীড়া ছিল, যাহাতে তিনি সময়-সময় লোকের সঙ্গ সহ্য করতে পারিতেন না, একাকী-একাকী থাকিতে ভালোবাসিতেন, অথবা SSct