পাতা:আত্মচরিত (সিগনেট প্রেস) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলিলেন, “আমার মাথার কাছে বসিয়া উপাসনা কর।” মহত্যুর পাবে কন্যাদিগকে বলিয়াছিলেন, “আমার মতদেহ ঘাটে লইয়া যাইবার পাবে একবার আশ্রমের উপাসনা কুটিরের বারান্দাতে শোয়াস।” তদনসারে তাঁহার শবদেহ আশ্রমের বারান্দাতে রাখিয়া প্রাথনা করা হইয়াছিল। তাঁহার সরল পবিত্র হািদয়ে পরস্পর বিরোধী ভাবের আশচযা সমাবেশ দেখিয়াছি। দনীতির প্রতি তাঁহার এমনি বিরাগ ছিল যে, ওরােপ জৰলন্ত ঘণা প্রায় দেখা যায় না। এই বলিলেই যথেস্ট হইবে যে, নিজের একজন নিকটস্থ আত্মীয়ের কোনো গহিত অনন্ঠানের কথা শনিয়া এতই বিরক্ত হইয়াছিলেন যে, সে ব্যক্তি দেখা করিতে আসিলে দেখা করিলেন না, এবং আর তাঁহার সহিত দেখা করিতে আসিতে নিষেধ করিয়া দিলেন। ব্রাহমদের মধ্যে কেহ ঋণ করিয়া টাকা দেয় না, মিথ্যা প্রবণচনা করে, বা আরও কিছ গরতের পাপে লিপিত হইয়াছে, শনিলে ঘণাতে অধীর হইয়া উঠিতেন। বলিতেন, “ব্রোহামসমাজে কি মানষ নাই ? এই হতভাগাদিগকে কান ধরিয়া দর করিয়া দেয় না কেন ?” অথচ যদি আবার বিশ্ববাস হইত যে, কোনো সন্ত্রীলোক দাবলতা বশত পাপে পড়িয়াছে বা তাহাকে প্রবণগুনা পর্বক কেহ বিপথে লইয়াছে এবং সেজন্য সে অনন্তপাত, তাহা হইলে ভগিনীর ন্যায় তাহার কাঠালিঙ্গন করিতেন; সময়ে অসময়ে যথেস্ট সাহায্য করিতেন, শ্রদ্ধা ও প্রীতি দিতে কিছমাত্র ত্রটি করিতেন না। বলিতে কি, অনন্তপত ব্যক্তির প্রতি তাঁহার সম্ভাব দেখিয়া আমরা অবাক হইয়া যাইতাম । সমাজের কােজ লইয়া ব্রাহাম-বন্ধদিগের সহিত সময়-সময় আমার মতবিরোধ হইত। সাধারণত আমি বাহিরের কথা ঘরে লইয়া যাইতাম না। কিন্তু প্রসন্নময়ী যদি কাহারও মাখে শনিতেন যে, আমাকে কেহ ককাশ কথা বলিয়াছেন, তাঁহার প্রতি কিছই বিরক্ত হইতেন না। বলিতেন, “সমাজ তোমারও যেমন, তাঁদেরও তেমনি; দশকথা বলিলেই দশকথা শনিতে হয়।” অধিক কি, নববিধানের বন্ধগণের সহিত কত বিরোধ করিয়াছি ও তাঁহাদিগের কত কাটক্তি ভাজন হইয়াছি, তাহা সকলেই জানেন। প্রসন্নময়ীকে যদি কেহ ঐ সকল কটক্তির কথা শনাইত, তিনি হাসিতেন; ঐ সকল কটক্তি সত্ত্বেও নববিধানের যে সকল বন্ধর সহিত তিনি একবার একগাহে বাস করিয়াছিলেন, তাঁহাদিগকে আপনার লোক ও অগ্রজ ভ্রাতার ন্যায় দেখিতেন; তাঁহাদের নাম হইলেই গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করিতেন, দেখা হইলেই আনন্দিত হইতেন। শনিয়াছি, শ্রদ্ধাস্পদ ভ্রাতা গৌরগোবিন্দ রায় ও কান্তিচন্দ্র মিত্র মহাশয়দ্বয় তাঁহাকে রোগশয্যাতে দেখিয়া বাহিরে যাইবার সময় লোকের নিকট বলিয়া গিয়াছিলেন, “ইনি তো আমাদের লোক।” বাস্তবিক, প্রসন্নময়ী যেখানেই থাকুক, প্রীতি ও শ্রদ্ধাতে মনে মনে তাঁহাদের লোক রহিয়াছিলেন। তবে নববিধানের নাতন মত ও কাজকম ভালো করিয়া বঝিতে পারিতেন না। Fr এই তো একদিকে আমার বিরোধীদিগের প্রতি উদারতা। কিন্তু অপর দিকে, যদি কখনো শনিতে পাইতেন যে, কোনো লোক গোপনে আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে নিন্দা করিতেছে বা লোক চক্ষে আমাকে হীন করিতে চেন্টা করিতেছে, তখন আর তাহার নাম সহা করিতে পারিতেন না। বলিতেন, “ও কাপরাষের নাম আমার কাছে করিও না,” বলিয়া ক্রোধাভরে সে সােথান ত্যাগ করিতেন। এই সকল গণে প্রসন্নময়ী সকলের প্রীতি ও শ্রদ্ধা আকষণ করিয়াছিলেন। Sህ ዓ