পাতা:আত্মচরিত (২য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

0 শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচারিত [ ৪র্থ পরিঃ কয়েক মাসের জন্য কয়েদ হইল। সে কয়েদ হইয়া কলিকাতার নিকটবর্ত্তী আলিপুর সহরের জেলে আসিল। তখন আমি ভবানীপুরে থাকিতাম ; আমার গ্রামবাসী ব্রাহ্ম যুবক হরনাথ বসু মহাশয় কালীঘাটে, থাকিতেন। শুকর মোল্লা মনিবের আদেশে অন্যায় কাজ করিয়া কয়েদ হইয়াছে, ইহার জন্য হরনাথ বাবু বড়ই দুঃখিত হইয়াছিলেন। তিনি কয়েদখানায় শুকর মোল্লাকে দেখিতে ও তাহার জন্য খাবার লইয়া যাইতে লাগিলেন। যতদূর স্মরণ হয়, আমি তখনও প্রকাশ্য ভাবে ব্রাহ্মসমাজে যোগ দিই নাই, কিন্তু " সাধু উমেশচন্দ্র দত্ত, কালীনাথ দত্ত, হরনাথ বসু প্রভৃতি ব্রাহ্ম যুবকদিগকে প্রগাঢ় শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিতে আরম্ভ করিয়াছি। হরনাথ আমাকে শুকর মোল্লার কয়েদের জন্য দুঃখিত দেখিয়া, প্রতি রবিবার আলিপুর জেলখানায় গিয়া শুকর মোল্লাকে মিঠাই প্রভৃতি খাওয়াইয়া আসিবার ভার আমার প্রতি দিলেন ; আমি তাহাই করিতে লাগিলাম। এই জন্য শুকর মোল্লার কয়েদের কথা আমার মনে আছে । স্বয়ং জমিদার বাবুরাও সেই জমি হইতে ব্রাহ্মদিগকে বঞ্চিত করিবার জন্য চেষ্টা করিয়া কৃতকার্য হইলেন না, ইহাতে ব্রাহ্মদের প্রভাব বাড়িয়া গেল। তখন অন্য প্রকার নির্য্যাতন আরম্ভ হইল। একজন ব্রাহ্ম যুবক “পাড়াগাঁয়ে একি দায়, ধর্ম্ম রক্ষার কি উপায় ?” নাম দিয়া এক নাটক রচনা করিলেন ; তাহাতে জমিদাবিলাবৃদিগকে লোক-চক্ষে উপহাসাম্পদ করিবার চেষ্টা করা হইল। বিবাদটা আরও পাকিয়া গেল। অবশেষে জমিদার বাবুরা বাড়ীতে বাড়ীতে লোক পাঠাইয়া বালিকা-বিদ্যালয়ে মেয়ে পাঠাইতে নিষেধ করিলেন। বলিলেন, “যে মেয়ে পাঠাবে, তাকে একঘরে করুবা।” “ আমি যখন প্রতি রবিবার গিয়া আলিপুর জেলে শুকর মোল্লাকে খাওয়াইতেছি, তখন জমিদারবাবুদের শাসনে স্কুলে মেয়ে পাঠান প্রায় বন্ধ হইয়াছে, কেবল আমার পিতামাতার দৃঢ়চিত্ততার গুণে আমার ; দুই ভগিনীকে লইয়া পণ্ডিত স্কুল চালাইতেছেন।