পাতা:আত্মচরিত (২য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৮৭০-৭২ ] ভারত-আশ্রমে কেশবচন্দ্রের বিমল সহবাস שכ .)f “আমাকে কোন কারণে রাগতে দেখে, তিনি প্রথমে বললেন, “তাই ত, তুমিও রেগে উঠলে ?” এই বলে এই ঘরেই কিছুক্ষণ চোখ বুজে বসে রইলেন, যেন পাষাণের মূর্ত্তি ; তার পর বাহির হয়ে গেলেন। খুঁজে দেখুন, বোধ হয় বাগানের কোন গাছতলায় চােখ বুজে বসে আছেন।” শুনিয়া আমি হাসিতে লাগিলাম। তিনি বলিলেন, “হাসেন কি ? ওই চোখ বুজে বুজেই আমায় সেরে আনছেন। আমি কিছু অন্যায় করলেই রাগ নাই, উষ্মা নাই, চোখ বুজে একেবারে পাষাণ-প্রতিমা হয়ে যান। আমি লজ্জায় মরে যাই । ভবিষ্যতে যাতে আর ওরূপ না করি, তার জন্য ঈশ্বর-চরণে বার বার প্রার্থনা করতে থাকি।” আমি শুনিয়া, ভাবিতে লাগিলাম, যাহার বাহিরে এত তেজ, বক্তৃতাতে যিনি অগ্নি উদিগরণ করেন, যাহার মনুষ্যত্বের প্রভাবে ধরা কম্পিত হয়, গৃহের মধ্যে র্তাহার এই আত্মসংযম | বাস্তবিক, কেশবচন্দ্রের আত্মসংযমশক্তি অতি অদ্ভুত ছিল। বাদ বিসম্বাদ, তর্ক খুদ্ধে আমরা অনেকেই অনেক সময় উত্তেজিত ও ক্রুদ্ধ হইতাম, কিন্তু তিনি ধীর ও স্থির থাকিয়া আপনার বক্তব্য প্রকাশ করিতেন। মনে হয় ত গভীর বিরক্তির আবির্ভাব, কিন্তু বাহিরে তাহার প্রকাশ নাই। সুযুক্তিপরম্পরা দ্বারা শ্রোতাকে কোণঠাসা করিয়া ধরিতেন। দীর্ঘকাল একত্র বাস করিয়া কেবল দুই এক স্থলে মাত্র তাহাকে উত্তেজিত দেখিয়াছি। নতুবা তিনি সর্ব্বত্র সর্ব্বকালে ও সর্ব্ববিষয়ে আমাদের নিকট সংযমের আদর্শ স্বীপ থাকিয়াছেন । এ কথা যখনই স্মরণ করি, হৃদয় উন্নত হয়, এবং নিজেদের দৈনিক ব্যবহারের জন্য লজ্জা হয়। তাহার সংযমের এই দৃষ্টান্তটা চিরস্মরণীয় হইয়া রহিয়াছে। উপসংহাৰুে বক্তব্য যে, কেশব বাবুৰ ঘর হইতে বাহির হইয়া বাগানে তঁহাকে অম্বেষণ করিতে গিয়া বাস্তবিক দেখিলাম যে, তিনি এক বৃক্ষের তলে নয়ন মুদ্রিত করিয়া গভীর ধ্যানে নিমগ্ন আছেন।