পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২২ শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচারিত [ ৫ম পরিঃ বিপদের সময় কিরূপে সাহায্য দানে বিরত থাকি ? সুতরাং আমি বাবাকে সমুদয় বিবরণ লিখিয়া দিয়া তঁহাদের সঙ্গে জুটলাম। যোগেন্দ্রের সহিত বাস করিবার প্রস্তাবে পিতার ক্রোধ ।-- বাবা এই সংবাদ পাইয়া অগ্নিসমান হইয়া উঠিলেন ; কারণ জ্ঞাতি কুটুম্ব ও গ্রামের লোক এই সংবাদ পাইলে গোলযোগ করিবে । তিনি আমাকে হঁহাদের সঙ্গ ‘ পরিত্যাগ করিবার জন্য আদেশ করিয়া পত্র লিখিলেন । আমি অনুনয় বিনয় করিয়া লিখিলাম, যে বিবাহের আমি ঘটক, সেই বিবাহ নিবন্ধন বিবাহিত দম্পতী যখন ঘোর নির্য্যাতন ও দারিদ্র্যের মধ্যে পড়িয়াছেন, তখন সাহায্যের উপায় থাকিতে সাহায্য না করা অধর্ম্ম ; সুতরাং সেরূপ কাজ আমি করিতে পারিব না। বাবা সে যুক্তির প্রতি কর্ণপাত করিলেন না ; পর্যন্ত লিখিলেন যে, তাহা হইলে তিনি আর প্রসন্নময়ীকে বাড়ীতে রাখিতে পারিবেন না, এবং আমাকে সস্ত্রীক গৃহ । হইতে নিৰ্বাসিত করিবেন। মাতুলের অনুমোদন লাভ —যখন এইরূপ চিঠিপত্র চলিতেছে তখন এক দিন বড় মামা আমাকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। আমি চাঙ্গড়িপোতা গ্রামে তাহার ভবনে গিয়া তঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিলাম । তিনি বাবার এক পত্র আমাকে দেখাইলেন । দেখিলাম, বাবা আমাকে নিরস্ত করিতে না পারিয়া বড় মামার শরণাপন্ন হইয়াছেন। চিঠি পড়িয়া আমি ধীর ভাবে সমুদয় ঘটনা মাতুলের নিকট বর্ণনা করিলাম ; কিরূপ নির্য্যাতন, কিরূপ দারিদ্র্য, কিরূপ সংগ্রাম চলিয়াছে, তাহা ভাঙ্গিয়া বলিলাম। বলিয়া তাহার উপদেশের অপেক্ষা করিয়া রহিলাম। মাতুল মহাশয় কিছুক্ষণ ধীর গভীর ভাবে চিন্তা করিয়া বলিলেন, “না, তুমি তাহাকে ত্যাগ করিতে পার না। তুমি তাহাদিগকে বিবাহে উৎসাহ দিয়া বিপদের সময় যদি তাহাদিগকে পরিত্যাগ কর, তাহা হইলে অধর্ম্মের। কাজ হইবে ; কাপুরুষতা হইবে ; আমার ভাগিনার মত’ কার্য্য হইবে না।”