পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> 8 R শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচারিত [ ৫ম পরিঃ " আসিলেন। মেয়েটিকে অগ্রে তিনি দেখেন নাই ; আমার কোলে তাহাকে দেখিয়া বলিলেন, “ও মেয়েটি কে হে ? বাঃ বেশ সুন্দর মেয়েটি তাঁ।” আমি বলিলাম, ‘ওটি পাশের বাড়ীর একটি ছুতরের মেয়ে, আমাকে দাদা বলে, আমার কোলে বসতে ভালবাসে। ওটি বিধবা, ওর মা ওর বিয়ে দিতে চায়, তাই আমাদের কাছে দিয়েছে।” এই কথা শুনিয়াই বিদ্যাসাগর মহাশয় চমকাইয়া উঠিলেন ; “বল কি ! এইটুকু মেয়ে বিধবা ।” তার পর তাকে ডাকিলেন, “আয় মা, আমার কোলে আয়।” সে ত লজ্জাতে যাইতে চায় না, আমি কোলে করিয়া তঁহার কোলে বসাইয়া দিলাম। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহাকে বুকে ধরিয়া আদর করিতে লাগিলেন ; শেষে যাইবার সময় মেয়েটিকে ও তাহার মাকে পালকী করিয়া তৎপর দিন বৈকালে তঁহার ভবনে পাঠাইবার জন্য অনুরোধ করিয়া গেলেন, এবং আমাকে বলিয়া গেলেন, “মেয়েটিকে বেথুন স্কুলে ভিত্তি ক’রে দেও, মাহিনী আমি দেব।” পর দিন বৈকাল বেলা মেয়েটিকে ও তার মাকে পালকী করিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বাটীতে পাঠান গেল। তাহারা সন্ধ্যার সময় আসিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জননী ভগবতী দেবীর যে প্রশংসা করিল। তাহা শুনিয়া আমাদের মন পুলকিত হইয়া উঠিল। শুনিলাম, ভগবতী দেবী ছুতরের মেয়ে বলিয়া তাহাদিগকে ঘৃণা করা দূরে থাকুক, মেয়েটিকে কোলে জড়াইয়াছেন, কাছে বসিয়া তাহাদিগকে খাওয়াইয়াছেন, এবং আসিবার সময় দুজনকে কাপড় দিয়াছেন। দুঃখের বিষয়, এই মেয়েটিকে বেথুন স্কুলে ভর্ত্তি করিবার পূর্বেই সেই বাড়ীতে বিষম কলেরা রোগে মহালক্ষ্মীর মৃত্যু হইল ; আমাদের বাসা ভাঙ্গিযা গেল ; আমরা ছড়াইয়া পড়িলাম। মেয়েটির মাও পাশের বাড়ী হইতে উঠিয়া গেল ; মেয়েটি আমাদের হাতছাড়া হইল। ছুতরের মেয়েটির পরবর্তী জীবন।-ইহার বহু দিন পরে মেয়েটির সহিত আমার আবার এক বার সাক্ষাৎ হইয়াছিল, তাহা এই সঙ্গেই