পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচরিত [ ২য় পরিঃ দিদী বলিয়া ডাকিতাম। চিন্তা সকল কার্য্যেই পটু ছিল। বন হইতে কাঠ কাটিয়া আনিত ; জাল পোলো প্রভৃতি লইয়া গ্রামের প্রান্তবর্তী খাল হইতে মাছ ধরিয়া আনিত ; গোলদোহন করিত ; বাজার হাট করিত, ধান ভানিত ; সর্বোপরি আমাদের প্রতি কেহ কোনও অত্যাচার করিলে বাঘিনীর ন্যায়। তার ঘাড়ে গিয়া পড়িত। চিন্তার প্রতাপে পাড়ার লোক স্বশঙ্কিত থাকিত। চিন্তা এমন সুস্থ ও সবল ছিল যে প্রাতে উঠিয়া ১৮১৯ মাইল হাঁটিয়া আমার মাতুলালয়ে তত্ত্ব লইয়া যাওয়া তাহার পক্ষে কিছুই কষ্টকর ছিল না। সেই শৈশবকালে চিন্তা দাসী বোধ হয়। আমাদিগকে বলিয়া দিয়াছিল যে, আমাদের বাটীর সম্মুখস্থ নারিকেলের গাছ রাত্রিকালে দেশ ভ্রমণ করে। এক ডাকিনী তাহাতে চাপিয়া বেড়াইতে . যায়। ইহাতে আমাদের শিশুদলে মহা ভয় হইয়াছিল, পাছে আমাদের নারিকেল গাছ হারাইয়া যায় ; কি জানি, ডাকিনী যদি কোথাও ফেলিয়া আসে। চিন্তা দাসী ইহা বলিয়া দিয়াছিল, গাছের গায়ে লোহা মারিয়া রাখিলে ডাকিনীতে গাছ লাইতে পারে না। আমার স্মরণ হয়, আমরা কয়েক জন শিশুতে মিলিয়া সন্ধ্যার পূর্ব্বে গাছের গায়ে গজাল মারিয়া রাখিয়াছিলাম। মজিলপুরে হার্ডিঞ্জ মডেল (বাঙ্গল) স্কুল।—গবর্ণর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জের রাজত্বকালে দেশে। কতকগুলি আদর্শ বাঙ্গলা স্কুল স্থাপিত হয়। তাহার একটি আমাদের গ্রামে স্থাপিত হইয়াছিল। কঁচড়াপাড়ানিবাসী শ্যামাচরণ গুপ্ত নামক এক জন ভদ্রলোক তাহার প্রথম পণ্ডিত নিযুক্ত হন। মা পাঠশালের গুরু মহাশয়ের প্রতি বিরক্ত হইয়া আমাকে পাঠশালা ছাড়াইয়া সেই স্কুলে ভর্ত্তি করাইয়া দিয়াছিলেন। সেখানে গিয়া আমি ‘স্কুল বুক সোসাইটি'র প্রকাশিত বর্ণমালা ও মদনমোহন তর্কালঙ্কারের নবপ্রকাশিত শিশুশিক্ষা পুড়িতে লাগিলাম। মদনমোহন তর্কালঙ্কারের শিশুশিক্ষায় অনেক পাঠ মিত্রাক্ষর ও কবিতার