বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৫৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিষ্ট ] ) , জননীর ধর্ম্মভাব 8ッ● এমন দিন কি এমন ক্ষণ মনে হয় না, যখন আমি ঈশ্বরের সত্তাতে অবিশ্বাস করিয়াছি। আর একটি ভাব মাতার মধ্যে দেখিতে পাইতাম। কপটাচারী ব্যক্তিদের প্রতি আমার মার আন্তরিক ঘৃণা ছিল। যাহারা মুখে বড় কথা বলে কিন্তু কাজে ছোট কাজ করে, যাহা মনের বিশ্বাস নহে তাহা কাজে দেখায়, ভিতরে অসাধু থাকিয়া বাহিরে সাধুতার পরিচ্ছদ পরিধান করে, মা তাহদের নাম পর্য্যন্ত সহ্য করিতে পারিতেন না । কেহ তাহদের প্রশংসা করিলে তঁহার গায়ে যেন তপ্ত জলের ছড়া দিত । হয় উঠিয়া যাইতেন, নতুবা সে প্রশংসা থামাইয়া দিতেন, এবং বলিতেন, “ব’লে না, ব’লে না ! ওর ধর্ম্মের মুখে ছাই ! ওর গেরুয়া কাপড়ের, ওর ভস্ম মাখার মুখে ছাই!” আর একটা এই দেখিতাম যে, যে কার্য্য তিনি এক বার কর্ত্তব্য বলিয়া অনুভব করিতেন, তাহা অতি দৃঢ়তার সহিত করিতেন ; লোকের অনুরাগ বিরাগের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতেন না। তাহার একটি নিদর্শন দিতেছি । এক বার দুর্ভিক্ষ হইয়া অনেকগুলি নিরন্ন লোক আমাদের গ্রামে উপস্থিত হইল। তাহদের মধ্যে একটি নিম্ন শ্রেণীর লোক চরম অবস্থায় মৃতপ্রায় হইয়া আমাদের পাড়াতে আসিয়া পড়িল। পাড়ার ব্রাহ্মণ কন্যাগণ তাহাকে ঘিরিয়া ফেলিলেন। আমার জননীও তার মধ্যে ছিলেন। মা তাহার কাছে বসিয়া, “তুমি কত দিন খাও নি ?” বলিয়া জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন । সে তখন কথা বলিতে পারে না, কেবল হা করিয়া নিজের ক্ষুধা জানাইতে লাগিল। মা বলিলেন, “আমি ওর মুখে ভাত দিব” ; এই বলিয়া ভাত আনিতে গেলেন। পাড়ার মেয়েরা বলিতে লাগিলেন, “ও মা, তা কেমন ক’রে হবে! ও কি জাত, তার ঠিক নাই। কোনও নীচ জাতীয় লোককে ডাক, সে খাওয়াক,” ইত্যাদি, ইত্যাদি। মা সে কথার প্রতি কর্ণপাত করিলেন না। ভাত আনিয়া