পাতা:আত্মজীবনী ও স্মৃতি-তর্পন - জলধর সেন.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

We আত্মজীবনী ও স্মৃতি-তৰ্পণ বিষয় চিন্তা করে জেঠামশায় আমার পিসিমাকেও সঙ্গে পাঠাবেন, ঠিক করলেন। সেই সময়ে আমাদেরই প্রতিবেশী স্বৰ্গীয় হরিনাথ মজুমদার সপরিবারে কলকাতায় থাকতেন। স্থির হ’ল যে, তার বাসাতেই গিয়ে উঠবো । কোন সালের কথা তা আমার মনে নেই। আমরা একদিন বাড়ি থেকে নৌকো করে কুঠিয়ায় গিয়ে, সেখানে থেকে রেলে চড়ে কলকাতায় উপস্থিত হলুম। তারপর আমার চিকিৎসা আরম্ভ হ’ল। সে চিকিৎসার সব কথা পূর্বেই বলেছি। হেকিমের চিকিৎসায় যখন আমার চোখের অসুখ সেরে গেল, তখন আবার লেখাপড়া শেখ আরম্ভ করতে হ'ল। কিন্তু এক মুস্থিলে পড়লুম। দু’তিন বছর আগে পড়াশুনা ছেড়েছিলুম, এখন দেখলুম। বাঙ্গালা স্কুলে পড়া আরম্ভ করতে গেলে, আমাকে আবার তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তিত হতে হয়। আমার ছোট ভাই শশধর তখন বাঙ্গলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছিল। আমি বড়দাদাকে বললুম, ছোট ভায়ের সঙ্গে এক ক্লাসে আমি পড়বে না। তিনি মহা ভাবনায় পড়লেন । তখন গোয়ালন্দে আমাদের বাস ছিল না, বড়দাদাই পরের বাসায় থেকে চাকরী করতেন, সেখানে আমাকে কি রকমে রাখা যায় ? শেষে স্থির হ’ল যে, গোয়ালন্দে একটা বাসা করে, বড়-বেী আর দু’। একজনকে নিয়ে যাওয়া হবে, তাহলে আমি গোয়ালন্দে গিয়ে নতুন মাইনর স্কুলে ভর্তি হ’তে পারি। তাতেও আর এক অসুবিধা উপস্থিত হ’ল । তথন আমার ইংরেজি বর্ণপরিচয়ও হয় নি। মাইনর স্কুলে নিম্নশ্রেণীতে ভর্তি হয়ে, মাইনর পরীক্ষা দিতে গেলে, আমার বয়স ১৭১৮ বছর হয়ে যাবে। আমি বড়দাদাকে বললুম, আপনি যদি রোজ সকালে ও সন্ধ্যার পর এক ঘণ্টা করে ইংরেঞ্জি পড়ান, তাহলে আমি দু’- মাসের মধ্যে মাইনর স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর উপযুক্ত ইংরাজী ভাষা শিখতে পারবো। বড়দাদা বললেন, সে কি সম্ভব, তোমার অক্ষর পরিচয় হয়নি, আর তুমি দু’- মাসের মধ্যে Moral Class Book পড়তে পারবে ? আমি বললুম, নিশ্চয় পারবো। তারপর দু’মাসকাল আমি যে ইংরেজি পড়েছিলুম, সে কথা আমার এখনও মনে আছে। ঠিক দু’মাস পরে আমাকে যখন গোয়ালন্দ মাইনর স্কুলে ভতি করার জন্যে বড়দাদা নিয়ে গেলেন, তখন স্কুলের হেডমাষ্টার মহাশয় আমায় ইংরেজি পরীক্ষা করে প্রশংসা করলেন ও আমাকে তৃতীয় শ্রেণীতেই নিলেন। তিন বছর গোয়ালন্দ স্কুলে পড়ে আমি মাইনর পরীক্ষা দিলুম ও ফরিদপুর জেলার সমস্ত পরীক্ষার্থীর মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করে মাসিক ৫ টাকা বৃত্তিলাভ করলুম। সেই পরীক্ষায় আমি আরও একটা পুরস্কার পেয়েছিলুম। রাজবাড়ীর