পাতা:আত্মপরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গ্রন্থপরিচয়

বর্তমান গ্রন্থে প্রকাশিত প্রথম প্রবন্ধটি ‘বঙ্গভাষার লেখক’ (১৩১১) গ্রন্থে প্রথম মুদ্রিত হয়। রবীন্দ্রনাথের সহিত দ্বিজেন্দ্রলালের যে বিরােধ এক সময়ে বাংলা সাময়িক সাহিত্যকে বিক্ষুব্ধ করিয়া তুলিয়াছিল, এই প্রবন্ধ হইতেই এক রূপ তাহার সূচনা হয়। দ্বিজেন্দ্রলাল এই প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের ‘দম্ভ ও অহমিকা’র সন্ধান পাইয়াছিলেন।[১] বঙ্গদর্শন-সম্পাদকের অহ্বানে, রবীন্দ্রনাথ এই অভিযােগের উত্তরে যাহা বলিয়াছিলেন, তাহার এক অংশ, মূল প্রবন্ধের পরিপূরকরূপে নিম্নে মুদ্রিত হইল—

 আমি মনে জানি, অহংকার প্রকাশ করিবার অভিপ্রায় আমার ছিল না।

 বহুদিন হইল জর্মন কবিশ্রেষ্ঠ গ্যয়টের কোনো রচনার ইংরেজি তর্জমাতে একটা কথা পড়িয়াছিলাম; যতদূর মনে পড়ে, তাহার ভাবখানা এই যে, বাগানের মধ্যে যে শক্তি গােলাপ হইয়া ফোটে সেই একই শক্তি মানুষের মনে ও বাক্যে কাব্য হইয়া প্রকাশ পায়।

 এই বিশ্বশক্তিকে নিজের জীবনের মধ্যে ও রচনার মধ্যে অনুভব করা অহংকার নহে। বরঞ্চ অহংকারের ঠিক উলটা। কেননা, এই বিশ্বশক্তি কোনাে ব্যক্তিবিশেষের বিশেষ সম্পত্তি নহে, তাহা সকলের মধ্যেই কাজ করিতেছে।

 তাই যদি হয় তবে এতবড়ো একটা অত্যন্ত সাধারণ কথাকে বিশেষ ভাবে বলিতে বসা কেন?

 ইহার উত্তর এই যে, অত্যন্ত সাধারণ কথারও যখন জীবনের বিশেষ অবস্থায় বিশেষ উপলব্ধি হয় তখন তাহা আমাদিগকে হঠাৎ একটা আলােকের মতো চমৎকৃত করিয়া দেয়। যাহা সাধারণ তাহাকেই বিশেষ করিয়া যখন জানিতে পাই তখন তাহার বিস্ময় বড়ো বেশি করিয়া আঘাত করে। মৃত্যুর মতাে অত্যন্ত বিশ্বব্যাপী নিশ্চিত ও পুরাতন পদার্থেরও


১২১

  1. কাব্যের উপভােগ: বঙ্গদর্শন মাঘ ১৩১৪