পাতা:আত্মপরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নদী ধায় নিত্যকাজে; সবকর্ম সারি
অন্তহীন ধারা তার চরণে তােমারি
নিত্য জলাঞ্জলিরূপে ঝরে অনিবার।
কুসুম আপন গন্ধে সমস্ত সংসার
সম্পূর্ণ করিয়া তবু সম্পূর্ণ না হয়—
তােমারি পূজায় তার শেষ পরিচয়।
সংসারে বঞ্চিত করি তব পূজা নহে;
কবি আপনার গানে যত কথা কহে
নানা জনে লহে তার নানা অর্থ টানি,
তােমাপানে ধায় তার শেষ অর্থখানি!

 আমার কাব্য ও জীবন সম্বন্ধে মূলকথাটা কতক কবিতা উদ্‌ধৃত করিয়া, কতক ব্যাখ্যা দ্বারা বােঝাইবার চেষ্টা করা গেল। বােঝাইতে পারিলাম কি না জানি না— কারণ, বােঝানো-কাজটা সম্পূর্ণ আমার নিজের হাতে নাই— যিনি বুঝিবেন তাঁহার উপরেও অনেকটা নির্ভর করিবে। আশঙ্কা আছে, অনেক পাঠক বলিবেন, কাব্যও হেঁয়ালি রহিয়া গেল, জীবনটাও তথৈবচ। বিশ্বশক্তি যদি আমার কল্পনায় আমার জীবনে এমন বাণীরূপে উচ্চারিত হইয়া থাকেন যাহা অন্যের পক্ষে দুর্বোধ তবে আমার কাব্য আমার জীবন পৃথিবীর কাহারো কোনাে কাজে লাগিবে না— সে আমারই ক্ষতি, আমারই ব্যর্থতা। সেজন্য আমাকে গালি দিয়া কোনাে লাভ নাই, আমার পক্ষে তাহার সংশােধন অসম্ভব― আমার অন্য কোনো গতি ছিল না।

 বিশ্বজগৎ যখন মানবের হৃদয়ের মধ্য দিয়া, জীবনের মধ্য দিয়া, মানবভাষায় ব্যক্ত হইয়া উঠে তখন তাহা কেবলমাত্র প্রতিধ্বনি-প্রতিচ্ছায়ার মতাে দেখা দিলে বিশেষ কিছু লাভ নাই। কেবলমাত্র ইন্দ্রিয়দ্বারা আমরা জগতের যে পরিচয় পাইতেছি তাহা জগৎপরিচয়ের কেবল সামান্য

২৮