পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সফলতার সদুপায়।
৯৭

কাব্যে, দেশের লোককে সভায় আহ্বান করিতাম ইংরেজিবক্তৃতায়। আজ যখন সেই পাঠশালা হইতে, একেবারে না হউক্, ক্ষণে ক্ষণে ছুটি পাইয়া থাকি, তখন সেই ছুটির সময়টাতে আনন্দ করিব কোথায়? মাতার অন্তঃগুরে নহে কি? দিনের পড়া ত শেষ হইল, তার পরে ক্রিকেট্‌খেলাতেও না হয় রণজিৎ হইয়া উঠিলাম। তার পরে? তার পরে গৃহবাতায়ন হইতে মাতার স্বহস্তজ্বালিত সন্ধ্যাদীপটি কি চোখে পড়িবে না? যদি পড়ে, তবে কি অবজ্ঞা করিয়া বলিব, ওটা মাটির প্রদীপ? ঐ মাটির প্রদীপের পশ্চাতে কি মাতার গৌরব নাই? যদি মাটির প্রদীপই হয় ত সে দোষ কার্? মাতার কক্ষে সোনার প্রদীপ গড়িয়া দিতে কে বাধা দিয়াছে? যেম্‌নি হৌক না, কেন, মাটিই হউক আর সোনাই হউক্, যখন আনন্দের দিন আসিবে, তখন ঐখানেই আমাদের উৎসব; আর যখন দুঃথের অন্ধকার ঘনাইয়া আসে, তখন রাজপথে দাঁড়াইয়া চোখের জল ফেলা যায় না, তখন ঐ গৃহে ছাড়া আর গতি নাই।

 আজ এখানে আমরা সেই পাঠশালার ফেরৎ আসিয়াছি। আজ সাহিত্যপরিষদ্ আমাদিগকে যেখানে আহ্বান করিয়াছেন, তাহা কলেজক্লাস্ হইতে দুরে, তাহা ক্রিকেট‍্ময়দানেরও সীমান্তরে, সেখানে আমাদের দরিদ্র জননীর সন্ধ্যাবেলাকার মাটির প্রদীপটিই জ্বলিতেছে। সেখানে আয়োজন থুব বেশি নাই—কিন্তু তোমরা এক সময়ে তাঁহার কাছে শ্রান্ত দেহে ফিরিয়া আসিবে বলিয়া সমস্তদিন যিনি পথ তাকাইয়া বসিয়া আছেন, আয়োজনে কি তাঁহার গৌরব প্রমাণ হইবে? তিনি এইমাত্র জানেন যে, তোমরাই তাঁহার একমাত্র গৌরব এবং আমরা জানি, তোমাদের একমাত্র গৌরব তাঁহার চরণের ধূলি, ভিক্ষালব্ধ রাজপ্রসাদ নহে।

 পরীক্ষাশালা হইতে আজ তোমরা সদ্য আসিতেছ, সেইজন্য